তুহিনের ইচ্ছাশক্তি

সুজন মোহন্ত
ফুটবলকে ভালবেসেছেন সেই ছোট্ট বয়সেই, দুরন্তপনার পাশাপাশি বল নিয়ে কাটতো তার সকাল-বিকাল। দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ফুটবলকে ভালবেসে ফেলেন তিনি। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে, রাস্তার পাশে একটি ফুটবল দেখতে পান। পরিত্যক্ত বলটি খেলায় জন্য অনুপযুক্ত ছিল। তারপরও সেই বলটি নিয়ে পড়ে থাকতেন এই কিশোর। তার বল নিয়ে এমন ভালবাসা দেখে, তার দাদা তাকে একটি কাপড়ের তৈরী ফুটবল তৈরী করে দেন। সেই থেকেই দাদার অনুপ্রেরণায় ধীরে ধীরে ফুটবল জগতে জড়িয়ে পড়ের তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্বেও ইচ্ছাশক্তির জোরে এখনও ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়ান তুহিন। সকলেই চেনে হাতকাটা তুহিন নামে।
তুহিনের পুরো নাম মোঃ তাউফিকুল ইসলাম তুহিন। পিতার নাম মোঃ আশরাফ হোসেন,মা আফরোজা বেগম। পরিবারে দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। তার পৈত্রিক নিবাস জেলা শহরের গওহর পার্ক মসজিদ এলাকায়।
১৯৮৪ সাল, তারিখটি মনে নেই। পরিবারের সাথে নানা বাড়ি রাজশাহী যাচ্ছিলেন তিনি। বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ নামক স্থানে মঠে একটি দুর্ঘটনা। পথে ছোট্ট একটি শিশুকে বাচাঁতে গিয়ে, গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিলেন চালন। ঘটানাস্থলে নিহত হয় ৯জন ও মারাতœক আহত হয় ৩২ জন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ডান হাতটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তুহিনের শরীর থেকে। এক হাত হারিয়েও ফুটবলে হারেননি তিনি। নানা প্রতিকুল পরিবেশের সাথে নিত্য লড়াই ছিল তার। একগ্রতা, মেধা, মননশীলতা, তীব্র মনোবল ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে, নিবিড় অনুশীলন করে বড় হয়েছেন এই ফুটবল প্রেমিক।
একাডেমিক ভাবে শুরুটা হয় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়–য়া অবস্থায়। ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে খেলেছেন ঢাকায় বাসাবো ও কদমতলায়,তার আগে খেলেছিলেন রাজশাহী আবাহনীতে। খুলনা নিউজপ্রিন্ট ছোট্ট দল হলেও খেলেছেন তিনি। বিভিন্ন ক্লাব ছাড়াও ফুটবলার তুহিন একহাত দিয়ে বর্তমানে নিয়মিত খেলেন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে। বিভিন্ন স্থানে আমন্ত্রিত হয়ে খেলতে যান। বল পায়ে তার নৈপূণ্য মুগ্ধ করে দর্শকদের। সর্বশেষ তার প্রশিক্ষণে বঙ্গবন্ধু কাপ ফুটবলের রংপুর বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয় কুড়িগ্রামের আশরাফিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। খেলায় পাশাপাশি খেলোওয়ার তৈরীর কাজও শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে মোহামেজান ক্লাব ও সীমান্ত কফি হাউজ জুনিয়র স্পোর্টিং ক্লাব এর প্রশিক্ষক হয়ে কাজ করছেন তিনি।
প্রশ্ন ছিলো, এক হাত নিয়ে খেলতে কোনো সমস্যা হয় না। আপনার? তিনি প্রতি উত্তরে বলেন, ‘হাত একটা কম থাকলেও আমার মনোবল ও ইচ্ছা শক্তি অনেক বেশি। তাই আমার কোন সমস্যা হয় না।’
হাত হারানোর পর তিনি কুড়িগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে কিছু আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছিলেন। এর বাইরে আর কোন সহযোগিতা পাননি তিনি। তাই আর্থিক কষ্টটা পোড়ায় তাকে। এখন কোচ হয়ে নিজের জীবনকে চালাতে চান। তাই এখন ইচ্ছা কোন সরকারি বা বেসরকারি স্পোর্টস একাডেমির মাসিক বেতনভুক্ত প্রশিক্ষক হওয়ার ইচ্ছে তার। এ কথা বলতে গিয়ে চোখ ছলছল করছিল এই ফুটবল প্রেমিকের। ৩৯ বছর বয়সী এই ফুটবলায় বর্তমানের এক কন্যা সন্তানের পিতা । মেয়েকে কুড়িগ্রামের রেহানা পারভীনের মতো দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আলোকিত নারী হিসেবে দেখতে জন বলে জানান তিনি।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Encrypted Content!