বারোমাসি প্যাঁচাল : কুকুর বিড়ম্বনা

আব্দুল খালেক ফারুক

১.
মেয়র আব্দুল জলিল রসিক মানুষ। কেউ তাঁর চেম্বারে পা রাখলেই নানা গল্পে জমিয়ে রাখেন। বলেন নানা বিড়ম্বনার কথাও। ঘুষ দিয়ে রাস্তার কাজ বাগিয়ে এনে ভ্যাজাল আরো নাকি বেড়ে যায়। কেউ জায়গা দিতে চায়না। মহাবিপদ! কথায় কথায় জানান দেন তিনি দুর্নীতি সহ্য করেন না। দুর্নীতি তাকে স্পর্শ করতে পারবেনা। গর্ব করে বলেন, তিনি ৪ টার্মের মেয়র। ৩ বার নাকি তাকে হারিয়ে দেয়া হয়েছে ষড়যন্ত্র করে!
এখন তার সামনে বড় বিড়ম্বনা কুকুর। এতোদিন পৌর কর্তৃপক্ষ বছরে অন্তত একবার কুকুর নিধন করতো। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন কুকুর নিধন করা যাচ্ছেনা। তিনি নাকি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অনুমতি চেয়েছেন কুকুর নিধনের জন্য। ডিসি সাহেব অনুমতি দিতে রাজী হননি। পরে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। তারা উল্টো উপদেশ দিয়েছেন-কুকুর নিধন করা যাবেনা। বরং কুকুরের শরীর থেকে জীবানু ধবংস করার তরিকা বাতলে দিয়ে কুকুরকে ভ্যাকসিন দিতে বলেছেন। কী বিপদ! এখন পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে কুকুরকে ভ্যাকসিন দিবেন মেয়র? ইজ্জত কা সওয়াল। ফল হয়েছে এমন- কুকুর মহাসমারহে বংশ বিস্তার করছে। লাইসেন্স পাওয়া মাস্তানের মতো ক্ষমতা জাহির করছে যত্রতত্র। মেয়র বলেন, ‘ভাই কুকুরের এমন উৎপাত যে মুরুব্বিরা ফজরের নামাজ পড়তে পারছেনা।’ ধর্মের উপর এতো বড় আঘাত! হেফাজত নিরব কেন?।
কুকুর কামড়ালে আগে হাসপাতাল ও পৌরসভায় প্রায় বিনামুল্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যেত। এখন তাও পাওয়া যাচ্ছেনা। বাইরে থেকে কিনতে খরচ পড়ছে তিন হাজার টাকা। দরিদ্রদের জন্য আর এক বিপদের আমদানি হয়েছে। এমনিতে মানবকুলে নানা পাগলের উৎপাত। ভ্যাকসিন না নিলে আরো পাগল বাড়ে কিনা তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে মেয়রের। এদেশে কখনও কখনও মানুষের চেয়ে পশুদের প্রতি দরদ উথলে ওঠে। ক্ষতিকর প্রাণিরা নিরাপদ থাকলেও উপকারি মানুষকে পদে পদে অপদস্ত করা হয়। ফলে কুকুর জাতীয় প্রাণির দাপট ও বংশবিস্তার হচ্ছে দ্রুত। আর শিক্ষত-সজ্জনরা গুণছেন প্রমাদ।
২.
কুড়িগ্রামের দারিদ্র্য নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা চলছে। দারিদ্র্যতার হার ৩ বছরে ৭ শতাংশ বেড়ে এখন সারাদেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন অবস্থান কুড়িগ্রামের। অনেকে একথা বলতে শরম পান। কুতর্ক করেন। আসল সমস্যা ভুলিয়ে দিতে কোশেশ করেন। উন্নয়নের দাবী তুললে বলা হয় সরকার বিরোধী। মেলেনা সমাবেশের অনুমতি। এ প্রসঙ্গে বাংলায় অনুবাদ হওয়া ইবসেনের ‘গণশত্রু’ নাটকে ড. ষ্টকম্যানের একটি সংলাপ প্রণিধানযোগ্য। গণতন্ত্রকে নিকৃষ্ট শাসন প্রমান করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘দেশে সংখ্যাগরিষ্ট কারা? শিক্ষিত না আহাম্মকরা? নি:সন্দেহে সব দেশে সর্ব ক্ষেত্রে আহাম্মকেরা সংখ্যাগরিষ্ট।’ কুড়িগ্রামের বেশীরভাগ মানুষ দিনমজুর। শিক্ষিত ও ধনী লোকের সম্পদ বেশী থাকলেও তাদের সন্তান সংখ্যা ২ এর বেশী হয়না। আর অশিক্ষিত দরিদ্র্যদের ঘরে ৪-৫ জনের কম সন্তান দেখা মেলা ভার। ৪শ চরের অবস্থা আরো খারাপ। সেখানে মুর্খ্য থাকার সব আয়োজন চূড়াান্ত। কোনমতে প্রাথমিকের গন্ডি পেরুলেও হাইস্কুল নেই। সামনে স্বপ্ন নেই- তাই লেখাপড়ায় আগ্রহ নেই। বাল্যবিয়ে হয় যত্রতত্র। ফলে আগেই সন্তান চলে আসে। সংসারে বাড়ে সন্তান সংখ্যা। সাথে উপসর্গ হিসেবে অসুখ, বিপদ-নানান ফাঁড়া। অনেক দিন আগে এক দিনমজুর আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন-ছেলে সন্তান বেশী হলে সংসারে আয় বাড়ে। মজুর খাটার লোক বাড়ে।
তাহলে কুড়িগ্রামে সংখ্যাগরিষ্ট কারা? ভবিষ্যতে কাদের সংখ্যা বেশী হবে? জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটের শক্তি কার বেশী? টাকা আর ভুল বুঝে ভুল প্রার্থী নির্বাচন করেন কারা? পাঠক এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে নিন। তাহলে কেন কুড়িগ্রামে এতো দারিদ্র্য- উত্তর মিলবে। উন্নয়নের দায়িত্ব যাদের ঘারে ন্যস্ত হয় ফাঁকতালে তারাও গুছিয়ে নেন আখের। দেদার টাকা কামান। তিন পুরুষের কামাই করে নেন। আর পাবলিকের জন্য ছোবড়াটা ছুঁড়ে দেন। আর নব্য জমিদারদের পায়ের কাছে বসে অনেকেই লেজটা ঘুরিয়ে বলেন-‘যথা আজ্ঞা জনাব।’

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Encrypted Content!