সৎ মানুষের খোঁজে তরুণ কাদের

আব্দুল খালেক ফারুক
দুটি স্কুলে সততা স্টোর প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের সৎ হতে উদবুদ্ধ করছেন সমাজকর্মে নিবেদিত উদ্যমী তরুণ আব্দুল কাদের। পাশাপাশি সৎ মানুষ খুঁজে বের করে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করে সন্মাননা প্রদানসহ বহ সৃজনশীল কাজে আত্মনিবেদিত তরুণ আব্দুল কাদের। মাষ্টার্স পাশ এই নি¤œমধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণের কাজ প্রচার হয়েছে হানিফ সংকেতের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন ‘ইত্যাদী’তে। কাদেরের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সদর উপজেলার আত্মারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হরিকেশ নি¤œ মাধ্যমিক স্কুলে সততা স্টোরে কোন বিক্রেতা নেই। স্কুলের নির্ধারিত কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে সততা স্টোর। পণ্য সাজিয়ে পণ্যের পাশে নির্ধারিত মূল্যে লিখে রাখা হয়েছে। পাশেই টাকা রাখার বাক্স। শিক্ষার্থীরা নিজেই পছন্দমত পণ্য ক্রয় করে বাক্সে টাকা জমা রাখেন। স্কুলের প্রত্যেকটি শিক্ষার্থী প্রতিদিনই সততা ও অসততার এর মুখোমুখি হয়ে সততাকেই বরণ করছে। শুধু তাই নয়, কাদের প্রতিনিয়ত সততার পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের সন্মাননা দিয়ে যাচ্ছেন নিজ খরচে।
নিজের অভিজ্ঞতা ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকায় একটি চাকরির পরীক্ষা দিতে যাই হানিফ নাইট কোচে। আমার সঙ্গে ছিলেন আমার বড় ভাই মোঃ সফিকুল ইসলাম এবং ভাইয়ের বন্ধু মোঃ তাজুল ইসলাম। যথারীতি ভোরে বাস থেকে ঢাকায় নেমে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে হোটেলে যাই। বিল পরিশোধ করতে গিয়ে দেখি আমার পকেটে মানি ব্যাগ নেই। হতাশ হই। আবার কাউন্টারে ফিরে যাই। গাড়ি নাম্বার নিয়ে রিকসা যোগে ভাইয়ের বন্ধু তাজুল ইসলাম সহ গাবতলির হানিফ বাস গ্যারেজে যাই। গিয়ে দেখি বাস ধোয়া মোচার কাজ চলছে । একটি মানিব্যাগ বাসে ফেলছি এমন কথা বলতে বাস কিøনার রনি সঙ্গে সঙ্গে তিনি মানি ব্যাগটি আমাকে ফেরত দিয়ে বললেন, ‘দেখেন ঠিক আছে কি না ?’ আমি দেখলাম সব ঠিক আছে। মানিব্যাগে টাকা ছিল ১২ হাজার । আমি খুশি হয়ে তাকে ১ হাজার টাকা দিতে চাইলে সে বিনয়ের সাথে না বললেন। তার এরকম সততা দেখে আমি অবাক হই। ১৫/১৬ বছর বয়সী রনিকে বুকে জড়িয়ে ধরি । এ রকম নিভৃতে হাজারো সৎ মানুষ আমাদের দেশে আছে। এদেরকে যদি নতুন প্রজন্মের সামনে দাঁড় করােেনা যায় তাহলে এরা এমন সৎ মানুষের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তারাও সৎ জীবন যাপন করবে। এই চিন্তা থেকে ২০১৫ সাল থেকে শুরু করলাম সৎ মানুষ খোজার অভিনব ও ব্যতিক্রমী পন্থা । নগদ অর্থ , গুরুত্বপূর্ণ কাগজের কপি এবং নিজ ঠিকানা লিখে মানিব্যাগে ভরে বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় ফেলে দেই। কেউ না কেউ সেই মানি ব্যাগটি পান। পাওয়া মানি ব্যাগটি লিখিত ঠিকানায় অথবা ফোন করে কেউ যদি অক্ষত অবস্থায় আমাকে ফেরত দেন তাহলে আমি ঐ ব্যক্তিকে নি:সন্দেহে সৎ মনে করি। ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আরো খোঁজ খবর নেই। ভাল বিবেচিত হলে তখন ওই ব্যক্তিকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শত শত ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতে ‘সততা সম্মাননা’ প্রদান করি। যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা ওই ব্যক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরাও সৎ জীবন যাপন করেন।’
কাদের জানান. ২০১৫ পযর্ন্ত ৮ টি মানি ব্যাগ কুড়িগ্রামের বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় ফেলে দেন। একটি মানিব্যাগও ফেরত পাননি। হাল ছেড়ে না দিয়ে আবারো মানিব্যাগ ফেলে দেয়া শুরু করেন। এর মাধ্যমে বেশ কিছু সৎ মানুষ খুঁজে পেয়ে তাদেরকে পুরস্কৃত করেন।
আব্দুল কাদেরের বাড়ি ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা গ্রামে। বিএ (অনার্স), এম এ পাশ। আট বছর একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার পর এখন বেকার। তারপরেও থেমে নেই সমাজের কল্যাণের জন্য তার ব্যতিক্রমী কার্যক্রম।

কাদেরের অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে, শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পড়ার হার রোধ এবং শিক্ষামুখী করতে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা, কুইজ প্রতিযোগিতা, সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া অনুষ্ঠান, গরিব শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে খাতা ও কলম সরবরাহ। দুর্নীতি, সড়ক দুর্ঘটনা, বাল্য বিবাহ, বৃক্ষরোপণ, যৌতুক , নারী নির্যাতন, মাদক ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য ছোট ছোট লিফলেট করে বিতরণ, পরিবার ও স্কুলে ফেরি করে বই বিতরণ করে পাঠ্যাভাস তৈরী, বয়স্ক নারী শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া বিভিন্ন পাড়ায় -পাড়ায় মহিলা দল গঠন করে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতার তৈরী, ছাত্র- ছাত্রী নিবাসে ধূমপান, মাদক ও আত্মহত্যা বিরোধী প্রচারণা, কুড়িগ্রাম শহরের ৭টি স্কুলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সচেতনতা তৈরী ছাড়াও কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়র্ভিটা গ্রামে চার বছর কৃষকদের নিয়ে কৃষক উৎসব করেছেন তিনি। তার কাজের কিছু অংশ হানিফ সংকেতের ইত্যাদীতে দেখানো হয়।
এ প্রসঙ্গে কাদের বলেন, ‘প্রচারের জন্য নয় নিজের ভালোলা থেকে কাজ করে যাই সমাজের জন্য। আশা করি আমাকে দেখে আরো অনেক তরুণ এগিয়ে আসবেন।’

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!