৩৬ বছর ধরে রোজা রাখছেন ইনছান আলী

বিভাস প্রতিবেদক
ঈদ উল ফিতরের এক দিন আর ঈদ উল আজহার চার দিন-বছরের মোট পাঁচ দিন রোজা রাখা নাজায়েজ। বছরের আর বাকী দিনগুলোতে রোজা রাখতে কখনও ভুল করেননি ইনছান আলী। ৩৬ বছর ধরে এভাবেই রোজা রেখে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন চরের এই দরিদ্র কৃষক। এই দীর্ঘ সময়ে তার কোন রোগ ব্যাধি হয়নি। বয়স ৭০ পেরিয়েছে। তাই ৩ বছর ধরে কবরে যাবার প্রস্তুতি চলছে তার। এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সব সময় সাদা পোশাক পরিধান করছেন। রাতে ঘুমানোর সময় বালিশ ব্যবহার করছেন না।
ইনছান আলীর বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা নদীর চর সারোডোবে। নদীভাঙা মানুষ। ধরলার তান্ডবে এ পর্যন্ত বাড়ি সরিয়েছেন ১১ বার। বাড়ি ভিটাসহ চরের অনুর্বর ৮০ শতক জমি থাকলেও তাতে পেটের খাবার জোগার হয় না। ছেলেরা দিনমজুরি করেন। বয়সের কারণে ইনছান কাজ করতে পারেন না। ৩ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ৩ ছেলে বিয়ে করে পৃথক। বাকী ২ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার অভাবী সংসার চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
ইনছান জানান, পরকালে আল্লাহর সান্নিধ্য পাবেন- এই আশায় ৩৬ বছর আগে রোজা রাখা শুরু করেন। তারপর আর থামেননি। একটানা রোজা রেখে গেছেন। যতদিন বাঁচবেন এভাবেই রোজা রাখবেন বলে তার নিয়ত পাকা। রোজা রাখলেও সেহেরি খেতে পা না অভাবের কারণে। স্রেফ পানি দিয়ে ইফতারি সারেন বেশীর ভাগ দিন। কালে ভদ্রে মেলে চাল ভাজা বা মুড়ি। ইনছান জানান, অনেকদিন তিনি চকলেট এমনকি গাছের পাতা দিয়ে ইফতারি সেরেছেন। তাতে তার কোন অসুবিধা হয়নি। রাতে এশার নামাজ পড়ে ভাত খান। তবে সব সময় ভাত মেলে এমন নিশ্চয়তা নেই। এখন একটানা ৪ দিন না খেলেও কোন সমস্যা হবে না বলে ইনছান আলীর বিশ্বাস।
তিনি জানান, রোজা রাখা শুরু করার পর থেকে তার তেমন কোন রোগ ব্যাধি হয়নি। এ সময় ওষুধ খেয়েছেন মাত্র ২০০ টাকার। তার কথা ‘ রোজা রাখি এটা মাবুদের খুশি। তাই তিনি আমাকে ভাল রেখেছেন’। তিনি আরো জানান, এখন কবরে যাবার প্রস্তুতি শুরু করেছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে সাদা পোশাক পরিধান, বালিশ ব্যবহার না করাসহ অনেক নিয়ম মানছেন। স্ত্রীর কথা জিঙ্গেস করতে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন তিনি। স্ত্রী জেলেখা খাতুনের সহযোগিতা ছাড়া এই অসাধ্য সাধন করা তার পক্ষে সম্ভব হতো না। তাই তিনি স্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!