বহুমাত্রিক বুলবুল বকসী

শফিকুল ইসলাম শাওন
কুড়িগ্রাম সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হাতে গোনা কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন- যারা সৃষ্টিশীল কর্মের মাধ্যমে কুড়িগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে করেছেন সমৃদ্ধ । তাদের মধ্যে অন্যতম দেবব্রত বকসী বুলবুল। একাধারে তিনি নাট্যকার, গীতিকার, সংগঠক ও একজন মুক্তিযোদ্ধা। বুলবুল বকসী শুধু নাটক ও গানের মধ্যে নিজের প্রতিভাকে সীমাবদ্ধ রাখেনি -তার হাতের ছোঁয়া লেগেছে কবিতায়, গল্প ও সাংবাদিকতায়। জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন সাংস্কৃতিক চর্চায়। তিনি একজন সফল সংগঠকও। কুড়িগ্রামের তরুণ অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে তিনি রুপম সংসদ পরবর্তীতে স্মৃতি সংসদ নামে ২টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ।
১৯৪৯ সালে কুড়িগ্রাম শহরের সবুজ পাড়াস্থ এক সভ্রান্ত সভ্রান্ত রায় সাহেব পরিবারে তাঁর জন্ম। স্কুল জীবনে তিনি ওস্তাদ বুলবুল চৌধুরী ও নীলিমা রাণী বক্সী এর হাত ধরে প্রথম সংগীত চর্চা শুরু করেন। ১৯৬২ সালে ‘টিপু সুলতান’ নাটকে টিপু সুলতানের পুত্র মোয়াজ্জেম-এর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্যমে তিনি নাট্য জীবনের যাত্রা শুরু করেন। সেই যে শুরু তারপর থেকে তিনি আর থেমে থাকেননি। পড়াশুনার পাশাপাশি গান গাওয়া, গান লেখা, গানে সুর দেওয়া, নাটকে অভিনেয় পাশাপাশি নাটক লেখা ও নাটক পরিচালনায় মনোনিবেশ করেণ। তাঁর প্রথম লেখা নাটক “ইন্টারভিউ” মঞ্চস্থ হয় ১৯৬৬ সালে। ১৯৮৬ সালে তৎকালীন রেডিও বাংলাদেশ ঢাকা জাতীয় বেতার ভবন থেকে “ব-কলমের গপ্পো” প্রচারিত হয়। কুড়িগ্রামের ইতিহাসে তিনি প্রথম ব্যক্তিত্ব যার প্রচেষ্টায় শিল্পকলা একাডেমী ঢাকা মঞ্চে তার লেখা, নির্দেশনা ও অভিনীত নাটক “ব-কলমের গল্পো” মঞ্চস্থ হয়।
১৯৭১ সাল তখন তিনি টকবগে তরুণ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিপরিষদ উত্তর এলাকার কুচবিহার টিমে তিনি নাট্য পরিচালনা ও নাট্যকার হিসেবে কাজ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে তাঁর লেখা নাটক “রক্ত শপথ” মঞ্চায়নের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও মনবল বৃদ্ধিতে সহায়ক হন তিনি। ১৯৮৩ ইং সনে তিনি তৎকালীন রেডিও বাংলাদেশের একজন গীতকার হিসেবে মনোনীত হন ও বাংলাদশে রংপুর কেন্দ্রে নাট্যভিনেতা এবং ১৯৯২ সালে নাট্যকার হিসেবে তালিকা ভূক্ত হন। তার লেখা বেতার নাট্যরুপ ছিল বঙ্কিম চন্দ্রের “কিপটে বুড়ো”, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “হৈমন্তী” ও উইলিয়াম সেক্সপিয়ারের “ম্যাকবেথ”। তার রচিত উল্লেখযোগ্য নাটক হল উপমা, তৃষ্ণা, সিঁড়ি, ফুলমতি, মধ্যরাত্রী ও দুই দিগন্ত। ২০০৪ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের গীতিকার হিসেবে মনোনীত হন। তাঁর লেখা গান দেশ বরেণ্য শিল্পীদের মধ্যে যারা গেয়েছেন তাঁরা হলেন, বশির আহমেদ, খুরশিদ আলম, সাবিনা ইয়সমীন, শাকিলা জাফর, সাবিনা নবী, সুবীর নন্দী, সালমা আলী, প্রবাল চৌধুরী, তিমির নন্দীসহ আরও অনেকেই। ইতিমধ্যে তাঁর লেখা একটি গানের এ্যালবাম গাংচিল এর প্রযোজনা ও পরিবেশনায় বের হয়েছে।
সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রাখার জন্য কুড়িগ্রামসহ অন্যান্য জেলার মানুষেরা কৃতজ্ঞতা স্বরুপ তাকে দিয়েছে অনেক বার সম্মাননা। তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে ১৯৭৭ ইং সনে প্রগতি সংসদ কর্তৃক শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, ১৯৯২ ইং সনে সাপ্তাহিক গণকথা কর্তৃক কুড়িগ্রামের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার, ২০০৯ সালে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখান জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমির সম্মাননা ছাড়াও ২০১০ সালের ২৬শে মার্চ এর মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জেলা প্রশাসন কুড়িগ্রাম কর্তৃক তাকে প্রদান করা হয় সম্মাননা স্বারক।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!