কুড়িগ্রামে ফিরে এসেছে পরিবেশ বান্ধব ঘোড়ার গাড়ি

আব্দুল খালেক ফারুক:
যান্ত্রিক পরিবহনের প্রসারের যুগেও কুড়িগ্রামে আবার ফিরে এসেছে ঘোড়ার গাড়ি। শহর- গ্রাম সর্বত্র ঘোড়ার গাড়ি চলাচল নজর এড়াতে পারেনা কারোরই। দুর্গম রাস্তায় কম খরচে পণ্য পরিবহনের সুবিধার কারণে বাড়ছে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা। এর সাথে যুক্ত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেক দরিদ্র পরিবার।
তাই গাড়িয়াল ভাইয়ের গরুর গাড়ি চাকার আওয়াজ এখন আর কানে আসে না উত্তরের প্রান্তিক জেলা কুড়িগ্রামে। তার বদলে চোখে পড়ে সারি সারি ঘোড়ার গাড়ি। শহর থেকে দুর্গম এলাকা পর্যন্ত এসব গাড়ি পণ্য টানে প্রতিদিন। বেকার দিনমজুতো বটেই,এক সময়কার রিক্্রা ভ্যানের চালকরাও ঘোড়ার গাড়িতে পণ্য টানছেন প্রতিদিন। প্রায় এক দশক ধরে চালু হওয়া ঘোড়ার গাড়ির প্রচলনের কারণে অনেক মানুষ জীবকার পথ ফিরে পাবার পাশিপাশি পরিববেশ বান্ধব এই যানবাহনটি স্বস্তির কারণ হয়েছে অনেকের।
কুড়িগ্রাম শহরের কালিবাড়িতে পরিত্যক্ত পাট গোডাউনের সামনে এখন ঘোড়ার গাড়ির ষ্ট্যান্ড। প্রতিদিন সকালে চরাঞ্চল থেকে ঘোড়ার গাড়ি এস পণ্য বোঝাই করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়না দেয় দুপুরের দিকে। গালামাল সামগ্রী, সার, সিমেন্ট ও কাচাঁমালসহ অনেক পণ্য পরিবহনের জন্য এখন ঘোড়ার গাড়িই অপরিহার্য বাহন। শুলকুর বাজারের শফিকুল জানান, আগে রিক্্রা চালাতেন, রাস্তাঘাট খারাপ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি আয় কমে যাওয়ায় ঋণ করে ঘোড়ার গাড়ি কিনেছেন।
যাত্রপুর ঘাটে গিয়ে দেখা যায় ঘোড়ার গাড়ি থেকে পণ্য নামিয়ে নৌকায় ওঠানো হচ্ছে। এই পণ্য যাবে নারায়নপুরসহ দুর্গম চরে। সেখানেও অপেক্ষা করছে ঘোড়ার গাড়ি। ঘোড়ার গাড়ির চালক সদর উপজেলার শুলকুর বাজার এলাকার মজিবর রহমান (৪৫) জানান, তিনি আগে নৌকা চালাতেন। আয় কমে যাওয়ায় এখন ধার দেনা করে ৩০ হাজার টাকায় ঘোড়ার গাড়ি কিনেছেন। ঘোড়ার গাড়ির চালকরা জানান, লাখ টাকার কমে আজকাল কেনা যায়না গরু বা মহিষের গাড়ি। তাই গরু-মহিষের গাড়ি কেনার সংগতি নেই অনেক পরিবারের। তাই গরু বিক্রি বা ঋণ করে হলেও ৩০-৪০ হাজার টাকায় ঘোড়ার গাড়ি কিনে সংসারের ঘানি টানছেন অনেকেই।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলার চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা ইদানিং বাড়তির দিকে। কারণ নদী ভাঙনের শিকার অনেক পরিবারের ফসল ফলানোর মতো জমি নেই, নেই অনুর্বর চরে কাজের সুযোগ। তাই ঘোড়ার গাড়িতেই তারা খুঁজছেন জীবিকার নির্ভরতা। নওয়াবশের ফয়জার আলী (৩৮) জানান, নদীর ভাঙনে জমির জিরাত সব হারিয়েছেন। এখন ঘোড়ার গাড়িটিই তার সম্বল। একই গ্রামের ধরলা তীরবর্তী নুর ইসলাম, কাশেম ও মেরাজসহ অনেকেই ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে পন্য টেনে জীবিকার পথ পেয়েছেন।
শুধু তাই নয়, ঘোড়ার গাড়িতে নদী বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরে পণ্য আনা নেয়া সাশ্রয়ী ও সুবিধাজনক বলে এলাকার ছোট বড় ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন ঘোড়ার গাড়ির দিকে। যাত্রাপুর বাজারের ব্যবসায়ী ছামছুল হক ও আবুল হোসেন জানান, বেশী পণ্য আনতে ট্রাক ব্যবহার করলেও কম পণ্যের জন্য গোড়ার গাড়িই তাদের নির্ভরতা।
যাত্রাপুর, পাঁছগাছি ও ঘোগাদহের বিভিন্ন গ্রামে ঘোড়ার গাড়ির উপর পরিবারের সদস্যদের জীবন ও জীবিকা নির্ভর করে বলে ঘোড়ার পালনে নারী ও শিশুরাও যুক্ত হয়েছেন। দিন-রাত পরিচর্যা করছেন পালিত ঘোড়ার।
পাঁছগাছি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আমির হোসেন জানান, চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হবার পর কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে। পণ্য পরিবহনে খরচ কম বলে প্রতিদিন বাড়ছে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা। উত্তর ধরলায় এখন ঘোঢ়ার গাড়ি সংখ্যা ৫ শতাধিক বলে তিনি জানান।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!