বিভাস প্রতিবেদক
বড় বোন গান গায়। আর সাড়ে ৩ বছরের ছোট ভাইটি অবলীললায় তবলা বাজায়। পেছনে দাঁড়িয়ে তার ওস্তাদ বাবা অনুপ্রেরণা দেন। শ্রোতারা মুগ্ধ হন সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদে তবলা বাদকের নৈপুণ্য দেখে। এভাবেই আইয়ুব আলীর শিল্পী পরিবারটি কুড়িগ্রামের সংগীতাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন।
আইয়ুব আলী নিজে ভাওয়াইয়া শিল্পী ও গীতিকার, স্ত্রী নুরি বেগম লোকসংগীত শিল্পী ও অভিনেত্রী, বড় মেয়ে আইরিন নাহার আঁখি ও ছোট মেয়ে আফরুজ্জাহান আশা ভাওয়াইয়া শিল্পী। ৩ বছর ৭ মাস বয়সী ছেলে নুর আলী মন্ডল নয়ন তবলা বাদক।
আইয়ুব আলীর বাড়ি রাজারহাট উপজেলার দেবিচরণ গ্রামে। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকে তিনি গান করেন। বিশেষ করে ভাওয়াইয়া গানের তালিম নেন অনিল চন্দ্র ও উলিপুর ভাওয়াইয়া একাডেমিতে। তাঁর রচনা ও পরিচালনায় ভাওয়াইয়া গানের অডিও ও ভিডিও এ্যালবাম বেড়িয়েছে ৪২টি। এর মধ্যে ‘আইসক্রিমওয়ালা’, ‘পাতি মারা চা’, ‘হাকাও গাড়ি লালমনি’সহ বেশ কয়েকটি এ্যালবাম দর্শক ও শ্রোতাদের মন জয় করছে। মেয়ে আইরিন গান শিখেছেন তার শ্যালিকা নুর বানুর কাছে। জাতীয় প্রতিযোগিতার মধ্যে জাতীয় স্কুল পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিভাগীয় পর্যায়ে আইরিন ৩ বার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এছাড়া গ্রাম থিয়েটারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘ভোর হলো’ সংগঠনের আয়োজনে সংগীত প্রতিযোগিতায় লোকসংগীতে প্রথম স্থান অধিকার করে তাঁর সম্ভাবনার দ্যুতি ছড়িয়েছেন। ছোট মেয়ে আশাও কম যান না। সে ব্র্যাক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় ভাওয়াইয়া গানে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ছেলে নয়ন দেড় বছর থেকে তবলায় তালিম নেন তার বাবা আইয়ুব আলীর কাছে। এছাড়া ওস্তাদ লাল চানের কাছেও তবলা শেখেন। এখন বেশ কিছু গানের সাথে তবলায় সঙ্গত করতে পারেন। যে কোন অনুষ্ঠানে তার তবলা বাজানো দেখে দর্শকরা মুগ্ধ হন।
আইয়ুব আলী নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন গণনাট্য ও পালা গানের দল ‘লালকুঁড়ি লোকনাট্য দল’। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে ইউনিসেফসহ বিভিন্ন সংস্থার আয়োজনে সচেতনতামুলক পালাগান ও গণনাটকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্ত্রী নুরি বেগম এই দলের হয়ে গান আর অভিনয় করেন।
এই সংগীত পরিবারটির আয়ের উৎস সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। আইয়ুব আলী ছেলে মেয়েদের নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। তিনি চান ওরা সংগীতে জাতীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত হোক। বিশেষ করে ছেলে নয়ন যেন আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করে গ্রিনিজ বুকে স্থান করে নিতে পারে এবং ইত্যাদীতে পারফর্ম করতে পারে সে ইচ্ছে তাঁর আছে।
শিল্পী পরিবারের গল্প
Facebook Comments
Share