আব্দুল খালেক ফারুক:
কুড়িগ্রামে জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল নানা নাটকীয়তার মধ্যে শেষ হলেও গ্রুপিং আর কোন্দল আরো বেড়েছে। আর বিএনপির জেলা কাউন্সিলকে ঘিরে তৃণমূলে কমিটি গঠন অব্যাহত থাকলেও কোথাও কোথাও দেখা গিয়েছে জটিলতা। জেলার রাজনীতিতে অন্যতম বড় দল জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললে চলে।
আওয়ামীলীগ
গত ১২ নভেম্বর জেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এই কাউন্সিলে দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রিয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিগত দু’টি কাউন্সিলে ভোটাভোটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়েছে। এবার সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কেন্দ্রের ইচ্ছায়। জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো: জাফর আলী চেয়েছিলেন বরাবরের মতো সাধারণ সম্পাদক পদে থাকতে। সভাপতি হিসেবে তাঁর পছন্দ ছিলো সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম মন্ডল। ভোটাভোটির মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হলে তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন হতো বলে মনে করেন দলের অধিকাংশ নেতা। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা ভোটাভোটির সুযোগ না রেখে জাফর আলীতে সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করে চলে যান। দু’জনের মতানৈক্যের কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বিলম্বিত হচ্ছে। পদ-পদবী পেতে শুরু হয়েছে গ্রুপিং লবিং। জেলা আওয়ামীলীগে আগে থেকে জাফর আলী ও আমান উদ্দিনের নেতৃত্বে দু’টি ধারা প্রবাহিত ছিলো। নেতা-কর্মীরা বিভক্ত ছিলেন দু’টি ভাগে। নতুন কমিটি গঠনের পর এই দ্বন্দ্ব কমবে-এমন লক্ষণ নেই।
উপজেলা পর্যায়ে অনেক স্থানেই দ্বন্দ্বের কারণে কাউন্সিল করা যায়নি। গত ৩০ নভেম্বর রাজারহাট উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে দ’ুটি গ্রুপ আলাদাভাবে কাউন্সিল করে দু’টি পৃথক কমিটি গঠন করেছেন। শাহের উদ্দিন ধনিকে সভাপতি ও আবু নুর মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামীলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে চাষী আব্দুস সালামকে সভাপতি ও অধ্যক্ষ আসিফ সোহরাওয়ার্দী রাজনকে সাধারণ সম্পাদক করে পাল্টা কমিটিও গঠন করে প্রতিপক্ষ গ্রুপ। রাজারহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়ার্দী বাপ্পির সমর্থন রয়েছে এই গ্রুপের প্রতি। এ নিয়ে সংঘর্ষ ও মামলার ঘটনাও ঘটেছে।
বিভিন্ন কারণে উলিপুর ও রাজীবপুর উপজেলার কাউন্সিল স্থগিত করা হয়েছে। উলিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মতি শিউলীকে দল বিরোধী কার্যকলাপের জন্য বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বহিস্কার করা হয়। নির্বাচনে জয়লাভের পর দলের একক নেতৃত্ব চলে আসে বর্তমান এমপি অধ্যাপক এম এ মতিনের হাতে। কিন্তু সম্প্রতি মতি শিউলীর উপর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলে দলীয় কোন্দল চাঙ্গা হয়ে ওঠে। দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বের কারণে শেষ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিল স্থগিত করতে হয়। অভ্যন্তরিণ কোন্দলের কারণে সম্মেলন হয়নি রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায়। রাজীবপুরে ফলে দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি
বিগত সংসদ নির্বাচনে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ বিএনপি দল গোছানোর কাজে নিয়োজিত আছে। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলায় কমিটি গঠন শেষ হলে জেলা বিএনপির কাউন্সিল হবে।
জেলা বিএনপিতে বর্তমান সভাপতি তাসভিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানার নিয়ন্ত্রণ থাকলেও একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে কমিটি গঠন নিয়ে সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানার কর্মকান্ডে সন্তুষ্ট নন দলের একটি অংশ। রানার একক সিদ্ধান্তে কমিটি গঠন নিয়ে নাগেশ^রী ও ফুলবাড়ী উপজেলায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিরোধের জের ধরে কিছুদিন আগে ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজীর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মান্নান মুকুল পৃথকভাবে কাউন্সিলের ডাক দিলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানার নাগেশ^রীর বাসায় বসে কমিটি ঘোষণা করেন তিনি। এতে নজীর হোসেন সভাপতি ও খোরশেদ আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এতে মুকুল গ্রুপ ক্ষুদ্ধ হয়ে ফুলবাড়ী বাজারে মিছিল সমাবেশ করে। মহাসচিবের কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। ফলে নতুন করে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি গঠন করার জন্য দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবীব দুলু নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে নাগেশ^রী উপজেলার সভাপতি গোলাম রসুল রাজা, সাধারণ সম্পাদক মোখলেছুর রহমানকে বাদ দিয়ে সাইফুর রহমান রানা তৃণমুলে সকল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নুরুন্নবী দুলালকে সভাপতি ও বাবলু মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করেন। গোলাম রসুল রাজা এই কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে রাজা বলেন, ‘সাইফুর রহমান রানার অগঠনতান্ত্রিকভাবে পকেট কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে আমরা কেন্দ্রের কাছে অভিযোগ করেছি। এখন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, ‘দলের ভেতর বর্তমানে কোন গ্রুপিং নেই। তবে নেত্বত্বের প্রতিযোগিতা আছে। এতে দলের কোন ক্ষতি হচ্ছেনা। বরং সাধারণ মানুষ সরকারের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বিএনপির দিকেই সমর্থন দিচ্ছে বেশী।’
জাতীয় পার্টি
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সাবেক মন্ত্রী মাঈদুল ইসলামের মৃত্যুর পর অনেকটা নি:সঙ্গ হয়ে পড়েছে জাতীয় পার্টি। বর্তমানে তাদের তেমন কোন সাংগঠনিক তৎপরতা চোখে পড়েনা।
দলের জেলা কমিটির আহবায়ক সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান নির্বাচনে হেরে যাবার পরে এলাকায় কম আসেন। দলের কোন কর্মকান্ডেও তাকে দেখা যায়না। বিগত নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-২ আসনে পনির উদ্দিন আহমেদ জয়লাভ করায় তাকে ঘিরে জাপার রাজনীতি অনেকটা কেন্দ্রিভূত। তিনি দলকে নতুন কলে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা জাপার সদস্য সচিব ও কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তৃণমূলের সব কমিটি নতুন করে গঠন করা হবে। আশা করা যায় এরপর দল আগের মতো শক্তিশালী হবে।’
আওয়ামীলীগে নতুন মেরুকরণ বিএনপি আগাছালো
Facebook Comments
Share