ত্যাদড় ক্যান্ডিডেট

এক

রোহিঙ্গা বাজারে চাল-ডাল কিনতে গিয়েছিলেন বিলাতি মামুদ। মাইকের শব্দে কানঝালা পালা। ডানে লাঙ্গল, বায়ে নৌকা, কানের কাছ দিয়ে ঝা করে গেল ধানের শীষ। এরমধ্যে সিংহ, হাতপাখা, আম, জাম, কলা-কত কিসিমের মার্কা! বৃদ্ধ বয়সে কানের পর্দা মনে হয় ফেটেই গেল। বিলাতি মামুদ বাজারে টিকতে না পেরে বাড়িতে চলে এলেন। রাতের খাবার খেয়ে কেবল ঘুমিয়েছিলেন। এমন সময় বাড়িতে মনে হয় ডাকাত পড়লো। মনে হচ্ছে অনেকগুলো মটর সাইকেলের শব্দ। হাকডাক দিয়ে বৃদ্ধ বিলাতিকে তোলা হলো। না ডাকাত নয়-কেন্ডিডেট। তার মতো বুড়ো। মুখে দাঁত অবশিষ্ট আছে কীনা ঠাওর করা যাচ্ছেনা। কথা ঠিকমতো বোঝা যায়না। বিকট শব্দে কাশি দিচ্ছেন ঘন ঘন। যায় য়ায় অবস্থা। তারপরেও শেষ বয়সে হয়তো তাঁর এমপি হবার খায়েস হয়েছে। হাতে পায়ে ধরে ভোট প্রার্থনা করে বহরটি চলে গেল। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় স্ত্রী গুলবানুর মন বেজার।
-কায় আচ্চে গো।
-আর কইস না। এক ঠ্যাং গোরোত গেইছে। তায় বোলে ফির এমপি হইবে।
-হইল তা তোমার কী!
-না আমার কী ! তা এমপি হবার জন্য পার্টি বোলে বদল করচে। এইগলা লোকের কোন নীতি আচে। বুড়া বান্দর।
-এই লোকটাক কিন্তুক মুই ভোট দিবার নং। মোক ফির জোরাজোরি করেন না।
-তোক মুই জোর করিম ক্যা। তোর ভোট তুই দিবু।
-কথাটা যেন মনে থাকে। যার নীতি নাই তার ভোটও নাই। আর এই বুড়া বয়সে ওমরা কদ্দুর কি করবে জানা আচে।
-এ্যালা নিন্দ আয়। কোন গজব যে চাপে ফির।

দুই
বহরের বিদায়ের পর আবারও ঘুমাতে যায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। কিছুক্ষণ পর আবার শব্দ। এবার মিছিল। কান পেতে শোনে বিলাতি বাবু। তার বাড়ির দিকে মনে আসছে।
বাড়ির আঙিনায় আবার হাকডাক।
-বাহে চাচা। এখনা উঠো বাহে।
-কী হইল। এতো হাঙ্গাম করেন ক্যা।
-আরে বাহে তোমার ভোট চাবার আচ্চি।
-এই জারুয়া দিনোত আর উৎপাত না করেন।
-কষ্ট করি একনা উঠো। কয়টা কথা কয়া যাই।
-আইতোত কোন কতা নাই। দিনোত আইসেন।
-আরে বাহে একনা বাইরা আইসো। তোমার পাওটা ছুইয়া সালাম করি।
-কম্বোলের তলোত ঠ্যাং গরম হইছে। তোমার ছ্যাং ছ্যাংগা হাত নাগার দরকার নাই।
-ভ্যাজালোত ফেলাইলেন চাচা। তা একটি বিড়ি অন্তত খাও।
-বাইরা টারোত খলাই বান্ধা আচে। দেও কয় প্যাকেট দেন। দিয়া বিদায় হন। খুব জার পড়ছে। আর বেশী উৎপাত করলে ভোটে দিবার যাবার নং। মুই খুব জিদি মানুষ। তোমার চাচী আরো বেশী। তাক চটাইলে খবর আচে।
-আচ্ছা। মাইন্ড করেন ক্যা চাচা। ঠিক আছে। মোর নিজের বিড়ির ফ্যাক্টরি আচে। ছয় প্যাকেট বিড়ি থুইয়া গেইলোং। ভোটটা দয়া করি দেন। কত বিড়ি খান দেখা যাইবে। খাইতে খাইতে যক্ষা ফান্দাইলে চিকিৎসারও ব্যবস্থা করমো।
-হ্যা। ছয় প্যাকেটে গ্যালগ্যালা হইলোং। এমপি হইলে তোমরা কত টাকা মারবেন তার শুমার আচে? তখনতো কারো দেখা পাওয়া যাবার নয়। শুননং এলা বোলে টাকা দিয়া নমিনেশনও যায়। কলিকালে আরো কত কী দেখমো।
পরাণ আলী বুঝলেন এই বুড়া ত্যাদর আছে। বেশী ঘাটানো যাবেনা। হিতে বিপরীত হতে পারে। হটে হাড়ি ভেঙে গেলে কর্মীরা মনোবল হারাবে। কর্মীদের নিয়ে তিনি অন্যবাড়িতে যাবার জন্য পা বাড়ালেন। এমন সময় শ্লোগান উঠলো। এয় মার্কা আছেরে-কোনসে মার্কা
-ছাগল।
নভেম্বর-২০১৮

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!