ভিক্ষে চাইনা, কুত্তা সামলান


বাড়ির গেটে স্বাস্থ্যবান কুকুর প্রহরারত। জিভে অনবরত লালা ঝরতে দেখে মনে হয় সহসা আক্রমণ সানাতে প্রস্তুত এই প্রভুভক্ত প্রাণীটি। বড় লোকদের শখের কী শেষ আছে? তা বেচারা ফকির জানবে কী করে এতো ফিকির! ফকির যথারীতি এসেছে ভিক্ষে নিতে। আল্লাহর নাম নিয়ে ভিক্ষে মাঙ্গতেই চোখের পলকে ছুটে এলো স্বাস্থ্যবান এ্যালসেসিয়ান। মনে হয় ফকিরকে ছিঁড়ে খুঁড়ে খেয়ে ফকির হবার অপরাধের একটা জুতসই শাস্তি দিবে এই জন্তুটি। তখন ফকিরের কী করুণ অবস্থা বুঝুন। ফকির তাই বার বার বাড়ির মালিকের প্রতি উচ্চ স্বরে আকুতি জানাচ্ছে ‘ভিক্ষে চাইনা মাগো-কুত্তা সামলান’।
২.
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে কুড়িগ্রামে আসেন। দলের একটি প্রতিনিধি সন্মেলনে ভাষণ দেন। বলেন অনেক মূল্যবান কথা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করার তাগিদ। তার ভাষায় ‘ক্ষমতায় এসে সাইবেরিয়ান শীতের পাখি আসে। ক্ষমতা চলে গেলে তাদের হাজার পাওয়ারের বাতি দিয়ে খুঁজে পাওয়া যায়না।’ কী নিরেট সত্য কথা। কুড়িগ্রামের অনেক নেতাকে দেখেছি জাতীয় পার্টির আমলে চৌধুরী শফিকুলের পদধূলি নিতে কতো ব্যাকুল। টেন্ডার আর সুবিধা পেতে তার করুণা না পেলে কী চলে? এরশাদের পতনের পর তাদের অনেকেই পাল্টিয়েছেন ভোল। কেউ ফিরেছেন বিএনপিতে। কেউ যোগ দিয়েছেন আওয়ামীলীগে। সুযোগ সুবিধা ছাড়াও বড় বড় পদ বাগিয়ে সুবিধাবাদের জয় নিশ্চিত করেছেন। শিল্পপতি আর টাকা ওয়ালারা রাতারাতি দলে যোগ দিয়ে প্রভাব বিস্তার করেছেন। আবার দলের ক্ষতি করতে কসুর করেননি। কিন্তু ত্যাগী কর্মীদের অনেকেই দলে কোণঠাসা। দু:খজনক হলেও সত্য এদের সংখ্যাই দিনে দিনে বাড়ছে। ক্ষমতার হালুয়া রুটির স্বাদ না পেলেও আঁকড়ে আছেন আদর্শ। এই ঘোর স্বার্থপর সময়ে নি:সন্দেহে তাঁরা নমস্য হবার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্য- ক্ষমতা আর অর্থের অন্ধমোহে দলের নেতাদের হাতেই এদের অনেকেই নিগৃহিত হন। এইসব নেতা ক্ষমতার দাপটে দিনকে রাত করতে চান। নিজেকে দেখতে পান, অন্যকে পাননা। পাহাড় সমান কষ্ট বুকে ধারণ করে দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকেন। জীবনের ঝুঁকি নেন-আদর্শ বিসর্জন দেন না।
এ জন্যই ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এতো গেট আমি কোথাও দেখিনি। তার মানে এখানকার নেতারা বেশ অর্থশালী। এই টাকাটা বিলবোর্ডের পিছনে খরচ না করে অসুস্থ আর অস্বচ্ছল নেতা কর্মীদের দিন। ত্যাগী কর্মীদের কোণঠাসা করলে আওয়ামীলীগ টিকবেনা। দু:সময়ের ত্যাগী কর্মীদের মূল্য দিতে হবে। এরা কখনও দল ছেড়ে যাবে না।’
তিনি সারাদেশে দলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চয়ই এমন উপলব্ধি করেছেন। আওয়ামীলীগের হাজার হাজার ত্যাগী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী দু:সময়ে মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন। অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। কিন্তু দল ত্যাগ করেননি। আজও তারা অর্থ আর পদের জন্য লালায়িত নন। ছেলের জন্য চাকুরি, নিজের ব্যবসার প্রসার কিছুই চান না। কারণ তাঁরা বুঝে গেছেন-ওগুলো বড়দের খাবার। টাকা ছাড়া কোন কিছুই মেলেনা। তার ত্যাগের কথা কেউ মনে রাখেনি। তারপরেও প্রাপ্য সন্মানটুকু নিশ্চয়ই চান। নিশ্চয়ই কেউ অর্বাচীনদের হাতে লাঞ্চিত আর অপমানিত হতে চান না। কিন্তু বাস্তবতা দেখে মনে হয়েছে-কুকুর আক্রান্ত এই ভিক্ষুকের মতো তারাও আর্তনাদ করছে-‘ভিক্ষে চাই না মাগো—’।
৩.
আক্কেল আলী একজন আওয়ামীলীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। দলকে ভালোবাসেন। তবে কোন কিছু আশা করেন না। সেদিন হঠাৎ হোন্ডা দাপিয়ে এক ডাকসাইটে নেতা তাঁর বাড়িতে পদধূলি দিলেন। তিনি প্রথমে অবাক হন। পরে বুঝতে পারেন ইলেকশন সমাগত। তাই কদর বাড়ছে তাদের। না-খালি হাতে আসেননি এই ডাকসাইটে। হাতে দুম্বার গোস্তের একটি প্যাকেট। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের উপহার তাঁর জন্য। আক্কেল আলী দু:স্থদের জন্য আসা একই খয়রাতি গোস্ত বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দিলেন। পরে খবর নিয়ে জানতে পারলেন কুড়িগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় একই কান্ড হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা দু:স্থদের জন্য আসা দুম্বার গোস্ত ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও নাকি অসহায় ছিলেন। যে দলের নেতা-কর্মীরা খয়রাতি গোস্তের স্বাদ পেতে এতো অস্থির-সে দলের সদস্য হয়ে লজ্জা পেলেও কিছুই করার নেই আক্কেল আলীর। তবে ভোটের মৌসুমে সবকিছুর হিসাব হয়-ইলেকশনের প্রচারে গেলে সেটা টের পায় আক্কেল আলী। কারণ এই আক্কেল আলীদেরকেই হাতে পায়ে ভোট কালেকশন করে নেতাদের উপহার দিতে হয়।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!