কুড়িগ্রামে পতিত জমিতে সূর্যমুখীর চাষ বদলে যাচ্ছে চরের চিত্র

হুমায়ুন কবীর সূর্য্য: কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মত পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সাফল্য পেয়েছে কুড়িগ্রামের চরের চাষীরা। এই চাষের ফলে একদিকে যেমন আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে; অপরদিকে পতিত অনাবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষক। সূর্যমূখী থেকে পাখির খাবারের পাশাপাশি কোলস্টরেলমুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পামওয়েল ও সয়াবিন এর স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রেহাই পাবেন ভোক্তারা। এই ধারণা থেকে চর ও দ্বীপচরগুলোতে কৃষিবিভাগ প্রণোদনার মাধ্যমে ব্যাপক জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে পাল্টে যেতে পারে এই এলাকার চিত্র। এবছর জেলায় ৫৫ একর জমিতে সূর্যমুখির চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম গ্রামের ধরলা নদী তীরবর্তী সর্দারপাড়া এলাকায় শীর্ন ধরলা নদীর বুকে প্রায় ৭ একর জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছেন কৃষক আবু বকর সিদ্দিক। শুরুতে কেউ কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও যখন কুঁড়িগুলো পাখনা মেলে প্রস্ফুটিত হয়ে হলুদ বর্ণে ছেঁয়ে যেতে লাগল, তখন ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ছুটে আসতে লাগলেন সৌন্দর্য পিপসুরা। সূর্যমুখীর ফলন দেখতে প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভীর জমাচ্ছেন।
কৃষক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘পতিত চরের জমিতে আগে তিনি কলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি লাগিয়েছিলেন। এতে খরচও বেশি সেই তুলনায় লাভ অনেক কম। এবারই প্রথম কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সহযোগিতায় প্রথম সূর্যমুখী চাষ করেছি।’ গত বছরের নভেম্বর মাসের ২০ তারিখে সারি সারি করে চারা লাগিয়েছেন। তিন মাসের মধ্যে ফুল দেয়া শুরু করেছে। চারমাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।
সূর্যমুখী চাষে তিনি কৃষি বিভাগ থেকে ১০ কেজি বীজ ও সার হিসেবে ইউরিয়া, পটাশ, জিপসাম ও ড্যাপ পেয়েছেন। এছাড়াও জমি তৈরী, বীজ লাগানো, পরিচর্যা, পানি সরবরাহ করতে গিয়ে তার প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে তিনি আরো জানালেন, সূর্যমুখীর পাতা ছাগল-ভেড়া খাওয়ার ফলে অনেক ক্ষতি হয়। এছাড়াও ছেলেমেয়েরা ফুল তুলে নিয়ে যায় এতেও সমস্যা হয়।
সূর্যমুখী চাষ দেখতে আসা কৃষক ওমর ফারুক, আবেদ আলী ও জামাল জানান, আমরা খবর পেয়ে এখানে এসেছি। ফলন দেখে সত্যিই আমরা অভিভূত। লাভজনক ও স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী চাষে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, জেলার ১৬টি নদ-নদীকে ঘিরে রয়েছে ৪ শতাধিক চর ও দ্বীপচর। এসব চরে কৃষি বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিবন্ধকতা সহনশীল ফসল চাষাবাদ করে পতিত জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনার কাজ করছে। চলতি বছর জেলায় ৫৫ একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীচাষ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। সূর্যমুখী সয়াবিনের বিকল্প তেল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে কোলস্টেরল কম। এছাড়াও পশুপাখির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!