করোনাকে অবহেলা করো না

-মাঈদুল ইসলাম মুকুল:
চুড়ান্ত লক্ষ¥ণ প্রকাশের আগের ১৪ দিনের মধ্যে একজন করোনা রোগী বহুলোককে সংক্রমিত করে ফেলে। যার ফলে প্রাণনাশী করোনা সংক্রমন বাড়ে জ্যামিতিক হারে। তাহলে বাংলাদেশে সে ভাবে বাড়ছে না কেন? আসলে করনা ভাইরাস শনাক্ত করার একমাত্র কেন্দ্রটি ঢাকায় (গত ২৬ তারিখ পর্যন্ত)। সাধ্যের সীমাবদ্ধতার কারনে অতি অল্প সংখ্যক রোগীর সংক্রমন শনাক্ত করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। যারা শনাক্ত হচ্ছেন তারা ঢাকা বা ঢাকার আশ পাশের লোক। আমরা জানি, ঢাকা এখন প্রায় জনশূন্য নগরী। সুতরাং প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ জন করে আক্রান্ত হবার যে পরিসংখ্যান আমরা পাচ্ছি সেটি মোটেই গোটা বাংলাদেশের চিত্র নয়। আল্লাহ না করুক, বৈশিষ্টগত কারনে করোনা সংক্রমন হয়তো জ্যামিতিক হারেই বাড়ছে। তবে সেটি শহরে নয়। গ্রামে। সে পরিসংখ্যান কারো জানা নেই। জানবার উপায়ও নেই।

জনবহুল ঢাকার অধিকাংশ লোক ইতোমধ্যে সংকট কালীন দীর্ঘ ছুটিতে গ্রামে চলে এসেছেন। গ্রামের লোকজন সহজ সরল এবং অসচেতন। গ্রাম গঞ্জের অধিকাংশ মানুষ বিশেষকরে বয়োজ্যেষ্ঠরা এখনো মনে করছেন এই অসুখ শহরের সমস্যা। গ্রামে আসবে না। তাই এহেন সংকটকালে তারা শহর ফেরত স্বজনদেরকে বুকে জড়িয়ে আনন্দ অশ্রুতে কিছুটাপ্রশান্তি লাভ করছেন। ছুটিতে আসা এসব শহর ফেরত লোকজন দেশের করোনা আক্রান্তের স্বস্তিকর প্রাত্যহিক পরিসংখ্যান দেখে বেশ আশ্বস্ত। তারা ইতালি,স্পেন বা যুক্তরাজ্যকে নিয়ে হা হুতাশ করছেন এবং গ্রামের মুক্ত বাতাসে প্রশান্তির শ্বাসনিয়ে ঈদানন্দে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু তারা জানে না করোনায় মৃত্যুর হার সারা বিশ্বে যেখানে মাত্র ৪.৩৭ সেখানে বাংলাদেশে মৃত্যু হার ১২.৮২। তারা আরো জানেনা যে তাদের অনেকেই বাসে বা ট্রেনে এই ভাইরাসটি বহন করে গ্রামে নিয়ে এসেছেন এবং জ্যামিতিক হারে সংক্রমন ঘটাচ্ছেন। আগামি দুই সপ্তাহের মধ্যে যখন সংক্রমন গুলো এক সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করবে তখনকার বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সামাল দেবার প্রস্তুতি বা সামর্থ্য আমাদের কতটুকু রয়েছে?

একটা বিষয় মনে করে দেখুন, আজ থেকে কয়েক সপ্তাহ আগে ইতালি,স্পেন, ফ্রান্স কিংবা জার্মানিতে করোনা সংক্রমন পরিস্থিতি প্রায় বাংলাদেশের মতই ছিল। প্রযুক্তি,চিকিৎসা সেবার মান, জীবন ধারণ পদ্ধতি, শিক্ষা-দীক্ষা, বোধ-বুদ্ধি সব কিছুতে আগুয়ান ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে পরের অবস্থাটা দেখুন। ১৫ দিন পর আমাদেরঅবস্থা কি তেমনি হতে চলেছে? আল্লাহই ভালো জানেন।

তবে একটু দেরিতে হলেও সরকারের যথোপযুক্ত কিছু পদক্ষেপের কারণে কিছুটা সময় আমরা পেয়েছি। সরকার চেষ্টা করছে আগামি ১৫ টা দিন লোকজনকে ঘরের ভেতর রাখতে। দেশকে মহামারি থেকে বাঁচানোর এই একটা পথই খোলা আছে আমাদের। কিন্তু বীর বাঙালী ঘরে বসে থাকতে পারে না। তাছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষ গুলোকে জীবিকার প্রয়োজনে বাইওে বের হতেই হয়। তাছাড়া আর্মিরা কতটা দায়িত্ব পালন করছে, সবাই তার মতো সচেতন কিনা সেটি নজরদারি করতে অনেকে নাকে মাস্ক পরে,হাতে গ্লোভস লাগিয়ে নিরাপদে বাইরে ঘুরছেন। তাদের অনেকের দাবি তারা জনসমাগম এড়িয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই চলছেন।

কিন্তু মশাই ,আপনি কি বাইরে গিয়ে কোথাও বসছেন না? যেখানে বসছেন সেখানে কি সারাদিনে আপনি ছাড়া আর কেউই বসেননি? পাড়ার চায়ের দোকানের সামনে নিরাপদ দূরত্বে দাড়িয়ে যে কাপে আপনি চা খাচ্ছেন, সেই কাপে কি আপনার আগে আর কেউই চা খায়নি? নিরাপদে চিপায় দাড়িয়ে সিগারেটে অগ্নি সংযোগ করার জন্য যে ম্যাচ বা লাইটার ব্যবহার করছেন সেটা কি দোকানদারের হাত হয়ে আপনার কাছে আসেনি?
হয়তো ভাবছেন বাসায় ঢুকে তো সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর ঘরে ঢোকেন আপনি। আপনি বেশ সচেতন মানুষ। তাহলে সমস্যা কোথায়?

সমস্যা অবশ্যই আছে। বাসায় ঢুকে গেটের শিকলটি লাগিয়ে দিয়ে চশমা,ঘড়ি,মাস্ক খুলে রেখে বাথরুমে ঢুকে হাত পা ভালো করে পরিস্কার করার পর যখন আপনি নিশ্চিন্তে রুমে প্রবেশ করে টিভিতে ইতালির আপডেট সংবাদ খুঁজছেন তখন গেটের শিকলে,বেড রুম বা বাথ রুমের দরজার হ্যাজবলে আপনার জীবানু যুক্ত হাতের প্রাথমিক ছোঁয়াগুলো রয়েই গেছে। করোনা ভাইরাস সহজে মরে না। তাই পরিবারের অন্য সদস্যরা যখন অজান্তেই ওই স্থানগুলো স্পর্শ করছে তখন স্বাভাবিকভাবে তারাও সংক্রমিত হচ্ছেন। তাছাড়া বাইরে থেকে বাসায় এসে কজন মানুষ তার পরনের জামাটা ধুয়ে দেন?

সুতরাং বাঁচার পথ একটাই । বাইরে যাওয়া বন্ধ। বন্ধ মানে বন্ধ। বেঁচে থাকলে গোটা পৃথিবীটাই আপনার। তখন ইচ্চে মতো ঘুরে বেড়াতে পারবেন আপনি। সচেতন হোন, বাসায় থাকুন। আপনার জীবন সৃষ্টিকর্তার দেয়া মহাপবিত্র আমানত। এ আমানত অনাদরে বিপন্ন করার কোন অধিকার আপনার নেই। নিজে বাঁচুন,অন্যকে বাঁচতেদিন। সর্বপরি আল্লাহকে ডাকুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে মাফ করুন। তাঁর মহান কৃপায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক পৃথিবী।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!