একটি ভোর ও ভালোবাসার অশ্বারোহী

আবু সাঈদ  মোল্লা:
           (গল্প-কবিতার একটি যুথবদ্ধ প্রয়াস) 
আমার ছোট খাটো ক্ষিধে পেলে চটজলদি দু’টো বিস্কিট কিংবা একফালি চিকেন কাটলেট চিবিয়ে একটি চায়ের পেয়ালায় ঠোঁট ছোঁয়ালেই সে ক্ষিধে অনায়াশে মিটে যায়। তার থেকে একটু বেশি ক্ষিধে পেলে, বড় জোর এক প্লেট ভাত, মাছ, ডাল,  সবজি ব্যস ।  আমি তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। এমনি করে ক্ষুধা নিবারণ করে আমি দিব্যি বেঁচে আছি। কখনও তেষ্টা পেলে এক গ্লাস ঠান্ডা জলে কয়েকটুকরো বরফকুচি, তার সাথে পাতিলেবুর রস চিপে ঢক ঢক করে গিলে ফেলি। আমার তৃষ্ণা মিটে যায়। আমি নিটোল জীবনের ভাঁজে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকি, বেঁচে থাকার আশায়। আমার সব তৃষ্ণা ফুরোয় । কেবল তোমাকে পাবার তৃষ্ণা রয়ে যায় অনন্তকাল, আমার সমস্ত শরীর জুড়ে। আমার প্রেমার্ত অাঙুল গুলো তোমাকেই ছুঁতে চায়।  আমার লিখতে বা, পড়তে ইচ্ছে হলে দ্রাবিড়, ইংরেজী কিংবা আর্যদের ভাষা রপ্ত করবার সমস্ত উপকরণ বই, নোটখাতা, ডটপেন আর কিছু উৎফুল্ল সময়ের গহ্বরে আমি ডুব দেই। খুব বেশি সুখপাঠ্য না হলেও পাঠকের বিরক্তি উদ্রেকের মতো কিছু একটা লেখা হয় ঠিকই । আমি লিখে যাই। প্রকৃতির নির্মল হাওয়ায় নিজেকে উজাড় করে দিতে,  আসন্ন বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আমি মেঘলা ভোরে অরণ্য পেরোই । রাস্তার পাশে দেবদারু আর পাইন পাতার গল্প শুনি, পুলকিত হই । এক অনিন্দ্য সুন্দর সকাল আমার মনের মধ্যে অানন্দ ভৈরবীর জন্ম দেয়-
‘ পাখিরা আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠেনিবিড় শয্যা ছেড়ে হামাগুড়ি দেয় শিশু,গোলাপের পাপড়িতে জমে থাকাএকফোটা শিশির, পৃথিবীকে অভিবাদন জানায়আমি তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি । 
হাঁক ছেড়ে দুর্দান্ত কলিম গাড়িয়াল কপালে কব্জিতে গামছা বেঁধে,চিলমারী বন্দরে যেতে যেতেআবছা অন্ধকারে চাল-ডালের হিস্যা বন্টনেমহিষের পিঠে ছোড়ে চাবুকআমি তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি ।
ভোবের অালো ফুটতে না ফুটতেইষাটোর্ধ নরেশ কাকা ঠকঠকে লাঠি হাতেদরাজ কন্ঠে দেয় ডাক–জাগো বাহে মা ভগ্নিরাদিনের হইলো শুরুযে যার কর্মে মন ঢেলে দাওকর্মই ধর্ম গুরু । নরেশ কাকার অহিংশ বাণীতেওআমি তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি ।
সোনালী ধানের ক্ষেতে, ঢেউ জাগানায়া বাতাসআর ঘাস ফড়িংয়ের প্রগাঢ় চুম্বনেআমি তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি।
অচেনা জঙলি ফুল আর গুল্ম লতার ঘন ছাঁয়ায়অবদমিত দুটি দেহের উষ্ণতায়, পাপ ও পুণ্যের ব্যবধান ভুলেআমি তোমার পায়ের আওয়াজ শুনি ।
ব্যধিগ্রস্ত আর শঙ্কিত পৃথিবীর ন্যূজ্ব পিঠেআজ যে মৃত্যুর মিছিল,সে মিছিলে আমি তোমার জয়ধ্বনী শুনি ।তোমার অনিবার্য বেঁচে থাকার দীর্ঘ পথেআমরা দু’জন ভালোবাসার অশ্বারোহী । ‘
                   এই দ্যাখো, আমার বিশ্বাস কতোটা প্রবল ! ” আমরা দু’জন ভাণোবাসার অশ্বারোহী “হৃদপিন্ডের পরিচর্যা শুধু হৃদপিন্ডই করতে পারে। কারণ তাকে ধরা যায়না, ছোঁয়া যায়না। কেবল হৃদয় দিয়েই অনুভব করা যায়। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর যেদিন তোমার নীল খামে চিঠি পেলাম, একেকটি অক্ষর নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল, দীপ্যমান ! একেকটি বাক্য ভালোবাসায় শৌর্য-বীর্যবান ।
” সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে, অনেক দেরিতে হলেও মিশেছি দু’জন একই মোহনায়। চিরচেনা এই পৃথিবীতে থেকেও দু’জন গড়েছি এক নতুন পৃথিবী । সমাজ চক্ষুর আড়ালে একদম নিভৃতে গড়ে ওঠা আমাদের পৃথিবীর নাম-ভালোবাসা। “
                                              সময় গড়িয়ে যায় সময়ের নিয়মেই । কেবল স্মৃতিগুলো জিইয়ে থাকে মগজের নিউরণে । কালের আবর্তে আমাকে বানানো হয়েছে আমার সাম্রাজ্যেই এক মুকুটবিহীন  সম্রাট । ভৌগলিক অবস্থানগত অামার কোন রাজ্য কিংবা অঙ্গরাজ্য নেই । প্রজা নেই, মন্ত্রী সেনা নেই ।আঁটসাঁট বেঁধে দেয়া আমার সীমান্তে কেবল আমিই প্রহরী । আমার জিভ কেটে দেয়া হয়েছে মানুষের বানানো অদৃশ্য ছুরি দিয়ে । আমার কথা বলতে নেই, হাসতে নেই, কাঁদতে নেই । পায়ে কাঁটা ফুটলেও উহ্ শব্দটিও করতে নেই । ক্রুশবিদ্ধ যীশুর মতো, আমার দু’হাতে ঠুকে দেয়া হয়েছে শক্ত পেরেক । আমি কেবল একতাল মাংশপিন্ড ছাড়া আর কিছু নই । আমি মুক, মুঢ় । আমার চোখে বেঁধে দেয়া হয়েছে কালো কাপড় । আমি কতোদিন উজাড় করা আকাশ দেখিনা, শঙ্খচিলের ডানা মেলা দেখিনা । বৃত্তাবদ্ধ জীবনের চৌকাঠ ডিঙ্গোতে পারিনা ।

৩১ মার্চ,২০২০খ্রিঃ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম ।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!