মসজিদে সকল ধর্মীয় কর্মকান্ড স্থগিত

শোভন প্রামানিক, মালয়েশিয়া থেকে:
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মালেয়শিয়ায় শুক্রবারের জুম্মার নামাজসহ সকল ধর্মীয় কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়েছে। গত ১৫ মার্চ জাতীয় ফতোয়া কাউন্সিলের ‘স্পেশাল মুজাকারা কমিটি’র সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর থেকে মুসলিম সম্প্রদায় এই সিদ্ধান্ত মেনে চলছে।
শ্রী পেটালিং মসজিদে তাবলিগ জামাতের সমাবেশের পর এদেশে করোনা ভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই জামাতে ১৬ হাজার লোক উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ৬৭৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। কতজন মারা গেছে জানতে পারিনি।
গত ১৬ মার্চ মালেয়শিয়া সরকার করোনা মোকাবেলায় লকডাউন ঘোষণা করে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। পরে লকডাউনের মেয়াদ ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সবখানে পুলিশি টহল আছে। সুপারশপগুলো সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সুপার শপের সামনে লম্বা লাইন থাকলেও সবার হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক আছে। দূরত্ব বজায় রেখে সবাই বাজার-সওদা করছে। সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অফিশিয়াল কাজগুলো সবাই বাসায় বসে করছে। অফিশিয়াল মিটিং অনলাইনে হচ্ছে। ১ এপ্রিল থেকে ফ্রি ইন্টারনেট সার্ভিসের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
এখানকার লোকজন অনেক সচেতন। তাই সরকারের নির্দেশ ও বিধি-বিধান মেনে চলছে। মানুষের সচেতনতাই এখানে করোনা মোকাবেলার বড় অস্ত্র হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ১১৬। মারা গেছে ৫০ জন। ২৬টি হাসপাতালে করোনা রোগী চিকিৎসা হচ্ছে, আর রোগ শনাক্ত করার জন্য পরীক্ষা করা হচ্ছে ৫৭টি হাসপাতালে। নির্দিষ্ট হটলাইনে যোগাযোগ করলে সরকারি লোক এসে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বেশি বেশি পরীক্ষা করার কারণে দিনে দিনে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর হার কমছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে মালয়েশিয়ার রাস্তাগুলো জনমানবহীন।

রাস্তাঘাট ফাঁকা। কাজ কর্ম বন্ধ। তাই অনেকের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তবে সেজন্য চিন্তার কিছু নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি ও আয়ের মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এপ্রিল ও মে-এই দুইমাসে অনুদানের টাকা ৫০ ভাগ করে দেয়া হবে। ছাত্র, পেশাজীবী কিংবা বেকার সবাই ভিন্ন ভিন্ন অংকের অনুদান পাবেন। যেমন যে পরিবারের আয় ৪ হাজার রিঙ্গিত, তারা পাবেন ১ হাজার ৬০০ রিঙ্গিত। ২৩ বছরের কম যাদের মাসিক আয় ২ হাজার রিঙ্গিত, তারা পাবেন ৮০০ রিঙ্গিত। ছাত্ররা পাবেন ২০০ রিঙ্গিত। সরকারি চাকুরিজীবীরা ৬০০ ও পেনশনধারীরা ৫০০ রিঙ্গিত করে পাবেন। তবে মালেয়শিয়ানরা সকল সুবিধা পেলেও বিদেশিরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। তাদের চিকিৎসা করাতে গেলেও অনেক খরচ করতে হয়। যদিও চিকিৎসা বীমা করা থাকলে খরচ কিছুটা কম হয়। করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও বাঙালিদের মধ্যে ভীতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে তারা দেশে স্বজনদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!