রায়গঞ্জে করোনার ভয় নেই, ভয় পুলিশের

হাফিজুর রহমান হৃদয়, রায়গঞ্জ, (নাগেশ্বরী) থেকে:
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। দিনে দিনে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের এবং মৃত্যুর সংখ্যাও। কিন্তু এ ভয় যেনো সামান্যতম স্পর্শ করছে না গ্রামের মানুষের মাঝে। এক কথায় তাদের করোনায় ভয় নেই এতটুকুও। ভয় শুধু পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে এমনটাই।
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের হাটবাজার গুলোতে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন জনসাধারন। বিশেষ করে চরাঞ্চলের হাটবাজারে এমন দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। বিকেল বা সন্ধ্যা হলেই গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে শুরু হয় উৎসবের আমেজ। স্থানীয়রা মনে করছেন ঢাকা থেকে আসা মানুষজনের আনাগোনাই বেশি। তারা দলবেঁধে ঘুরে বেড়ায় এ পাড়া ও পাড়া।
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের রায়গঞ্জ বাজার, বোর্ডের বাজার, সাপখাওয়া বাজার, রতনপুর, হাজির মোড়, মিনাবাজার, মোল্লার ভিটা-ঘাট পাড়, মাস্টারের মোড়সহ প্রায় সকল বাজারে ঘুরে দেখা গেছে মানুষের অবাধ চলাফেরা। বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ চায়ের দোকানগুলোর বাইরে থেকে ঝাপ বন্ধ থাকলেও ভিতরে ঠিকই চলছে চায়ের কাপে ঝড়। চলে দিন অবধি রাত পর্যন্ত আলোচনা ও আড্ডাও।
এছাড়াও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণেও মানা হয় না সামাজিক দূরত্ব। যা করোনা ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এছাড়াও ওই ইউনিয়নের রাস্তাগুলো দিয়ে চলাচল করছে রিকশা, ইজিবাইক, ট্রলি, ট্রাক্টরসহ বহু যান। চালকদের অধিকাংশের মুখেই নেই মাস্ক, হাতে নেই হ্যান্ড গ্লোভস।
রায়গঞ্জ বাজারে আসা ওমর ফারুক জানান, রায়গঞ্জ বাজারে বাজার করতে এসেছেন তিনি। মানুষের ভীড় দেখে চোখ কপালে উঠেছে তার। মানুষের ভীড়ে পা ফেলা দায়। হাজীর মোড় বাজারে আব্দুর কাদের নামের এক ব্যক্তি জানায়, প্রত্যন্ত এলাকার বাজার হওয়ায় সেখানে চরাঞ্চলের মানুষের সমাগমটা বেশিই থাকে। সেখানকার লোকজনের সচেতনতাও কম। প্রশাসনের নজরদারিও কিছুটা কম। তবে পুলিশ যখন আসে তখন সবাই ভয়ে পালিয়ে যায়। আবার পুলিশ চলে গেলে পুণরায় জনসমাগমে পূর্ণ হয় বাজার।


সাপখাওয়া বাজারের হোমিও চিকৎসক শেখ নুর ইসলাম জানান, বিকেল হলেই শুরু হয় বাজারে লোকজন আসা। ধীরে ধীরে বাজার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। তার দোকানসহ দুই তিনটি দোকানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকলেও নেই অন্যগুলোয়। সাপখাওয়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম জানায়, যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও দুধকুমর নদীর পার থেকে সাপখাওয়া-ব্যাপারীহাট সড়কে যান চলাচলের বাধা মানছেনা কেউই। বিশেষ করে বালুবাহী ও ট্রাক্টর চলাচলে অতিষ্ট এলাকাবাসী। প্রতিদিন বালুবাহী ৬-৭টি ট্রলি ও ট্রাক্টর আসা যাওয়া করে ওই রাস্তায়্ ট্রলির বালু উড়ে চোখে, মুখে, নাকে পড়ে। ফলে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধসহ অধিকাংশদের। এতে করোনার আতঙ্কও তাদের মাঝে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রিকশাচালক বলেন, পুলিশের মাইরের ভয়ে রিকশা নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হন না তিনি। স্ত্রী ও ৩ মেয়েসহ সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে তার। তাই মাঝে মধ্যে গ্রাম এলাকা দিয়ে রিকশা নিয়ে বের হন। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে বাজার খরচ করেন তিনি।
তবে খেটে খাওয়া মানুষের দাবি ঘরের বাইরে বের না হলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে তাদের। রায়গঞ্জ অঞ্চলে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ না থাকায় অধিকাংশ মানুষই পায় না সরকারি বা বেসরকারি সুযোগ সুবিধা। যেটুকু বরাদ্দ আসে তাও অপ্রতুর বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমির হোসেন বলেন, ইউনয়নের পরিষদের পক্ষ থেকে যথাযত ভাবে মাইকিংসহ নানাভাবে সতেনতা তৈরিতে কাজ করা হচ্ছে নিয়মিত। থানা প্রশাসন নিয়মিত বাজারগুলোতে তদারকি করছেন। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদারের মাধ্যমেও বাজারগুলোতে যাতে ভিড় না জমে এবং অপ্রয়োজনে যাতে কেই আড্ডাবাজি না করে সে ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। তবুও গ্রামাঞ্চলের মানুষদের অবাধ চলাফেরা ঠেকাতে হিমমিম খাচ্ছি।
নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ রওশন কবীর বলেন, প্রতিনিয়ত রায়গঞ্জ বাজারসহ ওই ইউনিয়নের সকল বাজারে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!