৫৭ আসামীর তালিকা প্রেরণ: স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে কুড়িগ্রাম কারাগারের বন্দিরা

বিভাস প্রতিবেদক:
আদালত পাড়া বন্ধ তাই কুড়িগ্রাম জেলখানায় বাড়ছে বন্দির সংখ্যা। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে নতুন বন্দি। কিন্তু মিলছে না কারো মুক্তি। জামিন যোগ্য ধারার আসামীদেরও পাঠানো হচ্ছে জেলহাজতে। ধারণ ক্ষমতার চার গুনেরও বেশী আসামী এখন কুড়িগ্রাম কারাগারে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। ফলে জেলখানায় বন্দিদের মাঝে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে কুড়িগ্রাম কারাগারের বিশেষ বিবেচনায় জামিনের লক্ষ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে সাজাপ্রাপ্ত ১১০জন আসামীর মধ্যে তিন ধাপে ৫৭ জন আসামীর সাজাভোগের সময় ও মামলার ধরণ উল্লেখ করে ঢাকায় তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান জানান, কারাগারে আসামী ধারণ ক্ষমতা ১৬৩জন। মঙ্গলবার কারাবন্দির সংখ্যা ছিল ৭০৬জন। একই সঙ্গে জেলে রয়েছে ৫ নারী কারাবন্দির দুগ্ধপোষ্য ৫ শিশু সন্তান। এদের ৩জন ছেলে শিশু ও ২জন কন্যা শিশু। কারাবন্দিদের মধ্যে ৬৭৭জন পুরুষ এবং ২৯জন নারী। এরমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত পুরুষ আসামী ১০৭জন ও নারী ৩জন এবং বিচারাধীন মামলার পুরুষ আসামী ৫৭০জন ও নারী আসামী ২৬জন। প্রতিদিন নতুন আসামী যুক্ত হচ্ছে জেলখানায়। ফলে স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে বন্দিরা। করোনার বিস্তার হয়ার শুরুর দিকে বিচারপ্রার্থীদের ১৫দিনে ১দিন এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মাসে একদিন সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হতো। নতুন নির্দেশনায় মঙ্গলবার থেকে আসামীদের সাথে সাক্ষাত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে কারাগারের নির্দিষ্ট মোবাইলের মাধ্যমে একজন বন্দি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৫মিনিট কথা বলার সুযোগ পাবে স্বজনদের সাথে।
জেলার আরো জানান, আদালত খোলা থাকলে প্রতিদিন গড়ে ২৫/৩৫জন আসামীর জামিন হতো। তখন আসামীদের চাপ কমতো। এখন নতুন বন্দি আসছে কিন্তু জামিন মিলছে না। এদেও মধ্যে জামিনযোগ্য ধারার মামলার আসামীও রয়েছে। ফলে কারাবন্দির পাশাপাশি কারাগার সংশ্লিষ্টরাও পড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন বলেন, কারাগারে বন্দিরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশী আসামী থাকায় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ওয়ার্ডে ঘুমাতেও হয় গাদাগাদি করে। ফলে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাতো রয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে গুরুত্বপূর্ণ মামলা ছাড়া, কম গুরুত্বপূর্ণ ও জামিনযোগ্য ধারার মামলার আসামীদের জামিনের উদ্যোগ নিতে পারে বিচার বিভাগ। সে ক্ষেত্রে ছুটির সময় একদিন কিংবা একাধিক দিন আদালত বসিয়ে জামিন শুনানি করে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। একই সাথে নির্বাহী আদেশে আসামী মুক্তি দেয়া যেতে পারে। বিচারক ইচ্ছে করলে নিজ জিম্মায়ও আসামীদের জামিন দিতে পারেন। এর বাইরে পুলিশ আসামী গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সতর্ক হতে পারেন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম আসামীদের দুর্ভোগ স্বীকার করে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে কারাবন্দিদের দুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতি উত্তোরণে বিচার বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোজা হবে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!