রাজারহাটে সচেতনতার অভাব, চলছে চোর-পুলিশ খেলা

আসাদুজ্জামান রতন, রাজারহাট থেকে:

মুখে মুখে মাস্ক প্রায় ৮০ ভাগ মানুষের। আবার হাঁচি পেলে মাস্ক সরিয়ে হাঁচি দেয়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয় ! আবার নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে প্রশাসনের কড়া সতর্কতা, বিক্রেতার আকুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কেনাকাটার কর্মটি সেড়ে নিচ্ছে। আবার তাগাদাও দেয় ‘তাড়াতাড়ি দ্যাও, পুলিশ আসপে!’ অহেতুক বাজারে ভীড়কারীদের হালকা উত্তম মধ্যমও হচ্ছে রুটিন করে, টহল পুলিশ বারবার সতর্ক করছে । ক্রেতার ভীড়ে দোকানদারের জরিমানাও হচ্ছে কিন্তু সামাজিক/ শারীরিকক দূরত্ব কমছে না। কাঁচাবাজার, সুপারির বাজার, মাছবাজারে আরও ভয়ানক অবস্থা। প্রশাসন দুদিন আগে সুপারির হাটটি অবশ্য রাজারহাট পাইলট স্কুল মাঠে স্থানান্তরিত করেছে। কাঁচাবাজারে শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দিয়েছে।  কিছু দোকানপাট চোর- পুলিশ খেলে কোন কোন সময় চালাচ্ছে বলে অভিযোগও আছে। রাজারহাট সদর বাজারের বাইরে উপজেলার ইউনিয়ন বাজার, গ্রামের বাজার,মোড়ের দোকানগুলোরও চোর- পুলিশ খেলার মতো। উপজেলা,পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী উপজেলার সবজায়গায় ঘরে থাকা, নিরাপদ দুরত্বের সতর্কবার্তা পৌঁছে দিচ্ছে জোরে-শোরেই। কিন্তু আত্মসচেতনতা শূন্যের কোঠায়।

ঠেলাগাড়ী টেনে রাজারহাট বাজারে হাট করতে যাচ্ছিলেন আনুমানিক  ৭০ বছরের মৃৎশিল্পী নেফারদরগাহ গ্রামের রমেশ। হেঁটে হেঁটে তার সাথে কথায় তিনি বললেন -হাঁড়ি না বেচলে হাড়িতে ভাত উঠবে না তার। বললাম, শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের হাট বসবে, আপনার দোকান না। জানালেন, যাই দেখি। উপার্জন কমতে শুরু হয়েছে তার। গত হাটে ১৫০ কি ২০০ টাকার মতো বিক্রি। সংসারে ৮ জন সদস্য। দুধখাওয়ার বকুল রিকশা চালিয়ে উপার্জন করে। করোনায় রাস্তায় মানুষ কম তাই পকেটে টান। আগে ৩৫০- ৫০০ আয় হতো। এখন ১০০- ১৫০ টাকাই বেশি। সকালে আটার দুটি রুটি খেয়ে রিকশায় উঠেছেন।

ভাড়া অটো চালায় আশিক। মহাজনকেই ৩০০ টাকা দিতে হয়। এখন আয় ৩০০ টাকার কম। তাই গাড়ি না চালিয়ে বাড়িতেই। আগের বাজার কিছু আছে, তাই চলছে কোনরকম। কয়দিন পর কর্জ ছাড়া উপায় নেই। দিনকামাই করে খাওয়া ছোটো চায়ের দোকানদার, বিভিন্ন দোকান এর কর্মচারী  অর্থাৎ শ্রমিক ঘরানার মানুষগুলো চরম বিপাকে। নিম্নবিত্ত, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা ইতোমধ্যে অস্বস্তি বোধ শুরু করেছে।

রাজারহাটে সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ আসে ৩১০ প্যাকেট। প্রতি প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল, আধা কেজি লবণ। দ্বিতীয় দফায় ৭ টি ইউনিয়নে ১৪ মে. টন চাল বরাদ্দ আসে এবং জনপ্রতি ১০ কেজি করে চাল মোট ১ হাজার ৪০০ জন, তৃতীয় দফায় ৭ টি ইউনিয়নে মোট ২১ মে. টন চাল বরাদ্দ এসেছে। বিষয়টি রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও  উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সংবাদকর্মীদের জানান।

টিসিবি’র ( ন্যায্যমূল্যের) পণ্যসামগ্রী বিক্রয় উপজেলায় চলমান রয়েছে। চিনি-৫০ টাকা কেজি, সয়াবিন তেল- ৮০ টাকা লিটার, মশুর ডাল-৫০ টাকা কেজিতে একজন একসাথে সর্বোচ্চ ৫ লিটার সয়াবিন, ২ কেজি চিনি, ১ কেজি মশুর ডাল নিতে পারবে শর্তে।

সাধারণ ক্রেতাদের যারা পাচ্ছে তাদের সন্তুষ্টি মিলছে। আবার যারা পাচ্ছেনা তাদের বিক্রির সময় ও স্পট বাড়ানোর চাহিদাও রয়েছে।

ত্রাণ সবার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিশ্চিত করার ব্যাপারটি সরকারের মতো সমাজের বিভিন্ন  সচেতনমহল জোর তাগিদ দিয়েছেন, যেন একটি মানুষও বাদ না যায়।

কিন্তু বড় সমালোচিত ঘটনাটি ঘটে গেছে ১০ টাকা কেজিতে চাল বিতরনে। ৭ টি ইউনিয়নে ১১ হাজার ৮২৭ জন রেশন কার্ডধারীদের অনেকেই অভিযোগ করেন পঁচা, দুর্গন্ধযুক্ত চাল সরবারাহের কথা। গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ঘটনাটি নিন্দিত হয়। অনেকেই ক্ষোভ-হতাশা প্রকাশ করে পোস্ট দেন। ইতোমধ্যে রাজারহাটের করোনা উপসর্গের একজনের নমুনা নেগেটিভ এসেছে। আরও দুজনের নমুনা পরীক্ষাগারে। সম্ভবত ওই দু’জন নারায়ণগঞ্জ ও একজন অন্য জেলা থেকে নিজ বাড়িতে এসেছেন। এখন পর্যন্ত খবর পাওয়া যাচ্ছে অনেকেই আক্রান্ত জেলাগুলো থেকে বিভিন্ন কায়দায় বাড়িতে আসছেন।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!