করোনা বিধ্বস্ত পৃথিবী হোক কল্যাণমুখী

আবু সাঈদ মোল্লাঃ

 আগেও বেঁচে ছিল এই এক লাখ মানুষ, আজ যারা নেই। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে । পৃথিবী ব্যাপি ২১০ টি দেশে মৃত্যুর মিছিলে শরীক হয়েছে এই লক্ষাধিক মানুষ । প্রতিদিন নতুন করে সংক্রমিত হচ্ছে নতুন নতুন দেশের অগণিত মানুষ। মানুষের চোখে মুখে ভেসে উঠছে এক ভয়াবহ আতঙ্ক, বেঁচে থাকার আকুতি । মৃত্যুর মিছিল যেন কোন ভাবেই থামছেনা। বরং দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে এই মৃত্যুর মিছিল !

                      অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সরকারি বেসরকারি নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেও ঠেকানো যাচ্ছেনা এই মৃত্যুর মিছিল । পৃথিবী ব্যপি অনেক প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী, ডাক্তার, গবেষক যে যাঁর অবস্থান থেকে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে মানুষকে বাঁচানোর জন্যে । নিশ্চিত ট্রান্সমিশন হবার সম্ভাবনা জেনেও ডাক্তার, নার্স, সংবাদকর্মী, পুলিশ, সেনা ত্যাগ আর মানবতার মহান ব্রত নিয়ে চিকিৎসা ও দেশের সেবায় এক যোগে কাজ করে যাচ্ছে । কিন্তু এই মৃত্যু নামক নেকড়ের হাঁ করা মুখ থেকে আমরা ফিরবো কবে ?  এই প্রশ্ন আজ কোটি কোটি উৎকন্ঠিত মানুষের চোখ জুড়ে । তবে আশার বাণী হচ্ছে- দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ থেকে প্রাণহানীর শিক্ষা নিয়ে আগ্রাসী মনোভাব পরিহার করা দেশ জাপান এই সংক্রমিত রোগের চিকিৎসায় ঔষধ আবিস্কারের প্রায় দ্বারপ্রান্তে। অন লাইন ভিত্তিক পত্রিকা ‘ বাংলা খবর ‘ জানিয়েছে, দেশটির ফুজি ফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস্  লিঃ ফ্যাভিপিরাভির ‘অ্যাভিগান’ নামে ট্যাবলেট তৈরী করছেন যা করোনা ভাইরাসকে কার্যকর ভাবে মেরে ফেলতে সক্ষম।  ওই কোম্পানি শীঘ্রই পরীক্ষামূলক ভাবে ঔষধটি বাজারজাত করবে । আমরা আশাবাদী তাদের এই আবিস্কৃত ঔষধ অসংখ্য মানুষের প্রাণ বাঁচাবে ।

               পৃথিবীর ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষ আজ গৃহবন্দি। এরা নিজেই নিজেকে বন্দি করে রেখেছেন জীবন বাঁচানোর তাগিদে। আর এতে করে রাস্তায় লক্ষ লক্ষ গাড়ি হর্ণ বাজিয়ে শব্দ দূষণ করছে না । বেঁচে যাচ্ছে কোটি কোটি ব্যারেল তেল, লাখ লাখ ঘনফুট গ্যাস সহ অন্যান্য জ্বালানী । কলকারানায় উৎপাদন না হওয়ায় বর্জ্য আর বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হচ্ছেনা । এতে করে পৃথিবী তার ভারসাম্য রক্ষায় নিজেকে কার্যকরী করে তুলছে । একটা ছাঁচে ঢালাই হয়ে আমরা সভ্য জাতিতে পরিণত হয়েছি । এখন আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, কেমন হবে করোনা বিধ্বস্ত আগামীর পৃথিবী ?  বিশেষজ্ঞদের মতে- করোনার ধ্বংশযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেলেও আগামীর বিশ্ব অর্থনৈতিক ভাবে তীব্র সংঙ্কটের মুখে পড়বে ।

                   উৎপাদনশীল কল-কারখানার পরিসর ছোট হবে। দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ বিদেশে কর্মরত থেকে রেমিটেন্স সংগ্রহ করে দেশের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে করলেও করোনা পরবর্তী সময়ে তারা আর বিদেশমুখী না হয়ে দেশেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলতে আগ্রহী হবেন। মানুষে মানুষে দ্বন্দ্ব, হানাহানি কিছুটা হলেও কমবে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে উঠবে। দম্ভ, অহমিকা আর অত্যাচার থেকে মানুষ বিরত থাকবে । আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, গোটা পৃথিবীর মানুষের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতে ইসরায়েলি দানবেরা অসহায় ফিলিস্তিনিদের উপর আর অহেতুক হামলা চালাচ্ছে না । ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে । আমেরিকা খলনায়কের ভূমিকা রাখছেনা । মিয়ানমানের নরপশুরা তাদের দেশে অবস্থিত বাকি রোহিঙ্গাদের উপর আর অত্যাচারের খড়গ চালাচ্ছে না। এই দুঃসময়ে পৃথিবীর এক দেশ অন্য দেশের সহযোগীতা চাচ্ছে । মহামারি, দূর্যোগ থেকে মানুষ শিক্ষা নেয়। মানুষের মধ্যে সহমর্মিতা গড়ে উঠে। একে অপরের উপর ভরসা করতে শেখে। আমরা অধিকতর আশা করবো, উন্নত রাষ্ট্গুলো করোনা বিধ্বস্ত পৃথিবীর কাছে শিক্ষা নিয়ে মানবতার পতাকা উড়িয়ে পারমাণবিক মারণাস্ত্র আর সামরিক খাতে ব্যয় কমিয়ে সেই সঞ্চিত অর্থ মানব কল্যাণে ব্যয় করবে। তাতে মানুষে মানুষে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে উঠবে।  কল্যামুখী  ভাবনার প্রসার ঘটবে । করোনা বিধ্বস্ত আগামীর পৃথিবীর কাছে এই হোক আমাদের সকলের চাওয়া ।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!