করোনার ঝুঁকি নিয়ে ধান কাটতে যাচ্ছেন কুড়িগ্রামের কৃষি শ্রমিকরা

আব্দুল খালেক ফারুক:
করোনা পরিস্থিতির কারণে ধান কাটার মৌসুমে বেকার বসে আছে কুড়িগ্রামের হাজারো কৃষি শ্রমিক। টানা কর্মহীনতার কারণে সংসারে দেখা দিয়েছে অভাব। ধার-দেনা আর দাদনের উপর নির্ভর করে চলছে দিন। এ অবস্থায় করোনা ঝুঁকির মধ্যে অনেকেই প্রশাসনের বিশেষ অনুমতি নিয়ে রিজার্ভ বাসে ধান কাটতে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শুক্রবার পর্যন্ত চারটি উপজেলার ২৮৬ জন কৃষি ধান কাটার জন্য কুড়িগ্রাম ছেড়ে গেছেন। আরো প্রায় ১ হাজার শ্রমিক অনুমতির জন্য আবেদন করেছে কৃষি বিভাগে।
কৃষি বিভাগ ও দিনমজুরদের সুত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর ধান লাগানো ও কাটার মৌসুমে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক কৃষি শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এক থেকে দুই মাস টানা কাজ করে ৮-১০ হাজার টাকা জমিয়ে বাড়িতে ফেরেন। মাঠে কাজ না থাকার সময়টা এই টাকায় চলে সংসার। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতংকে কেউ যেতে পারছেন না। অনেকেই এখনও ত্রাণ সহায়তা পাননি। তাই চড়া সুদে নেয়া দাদনের উপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন অনেকেই। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের কয়েকজন দিনমজুর নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা প্রতি হাজারে ১২০ টাকা সুদ দেয়ার চুক্তিতে দাদন নিয়েছেন। ধান কাটতে যেতে না পারলে এই দাদনের টাকা শোধ করা সম্ভব হবেনা।
রাজারহাট উপজেলার চর জয়কুমার গ্রামের দিনমজুর বেলাল হোসেন, জাহিদুল ও এন্তাজ আলী জানান, তারা ধান কাটতে টাঙ্গাইল যেতে ইচ্ছুক। সেজন্য ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে কাগজপত্র জমাও দিয়েছেন। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চেক করে করোনা পরীক্ষা করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কীনা-এই ভয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিধায় ভুগছেন।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বৃহষ্পতিবার রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ধান কাটার জন্য গেছেন নাগেশ^রী উপজেলার ২৩ জন শ্রমিক। আগের দিন উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের ৩১ জন শ্রমিক গেছেন গাজীপুরের জয়দেবপুরে। শুক্রবার একই স্থানে গেছেন উলিপুরের ১২০ জন, গাজীপুরের শ্রীপুরে ভুরুঙ্গামারীর ৩৫ জন ও সুনামগঞ্জে গেছেন সদর উপজেলার ৯ জন শ্রমিক। এর আগে চিলমারীর ২৬ জন ও সদরের ৪২ জন শ্রমিক কিশোরগঞ্জের নিকলি ও নাটরের সিংড়ায় গেছেন ধান কাটতে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আরো ৯৭৬ জন শ্রমিক আবেদন করেছেন ধান কাটতে যাওয়ার।
উলিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সাইফুল ইসলাম জানান, ধান কাটতে আগ্রহী কৃষি শ্রমিকরা প্রথমে কৃষকদের সাথে যোগাযোগ করে। এরপর নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে। ইউপি চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্যকর্মী ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুপারিশ করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে ছাড়পত্র দেয়া হয়। অনুমতি দেয়ার পর বাস রিজার্ভ বাসে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষার নিশ্চিত করে যাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রওয়না দেয়ার আগে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে। বাসের সামনে ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে ব্যানার।
তিনি আরো জানান, যে এলাকায় কৃষি শ্রমিকরা যাচ্ছেন, সেখানকার প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে পারেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ধান কাটার শ্রমিকদের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। তবে ধান কাটতে অনেক শ্রমিক দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে চাইলেও শেষ মুহূর্তে পরিবারের সদস্যদের কান্নাকাটির কারণে অনেকেই যাত্রা বাতিল করছেন।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!