কুড়িগ্রামে চাঞ্চল্যকর ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় আটক ৩ আসামী ৫ দিনের রিমান্ডে

বিভাস প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ডাকাতির উদ্দেশ্যে মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় মূল ৩ আসামীকেই গ্রেপ্তার করেছে রাজারহাট থানা পুলিশ। শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে আসামীদের অবস্থান সনাক্ত করে চরম গোপনীয়তার মধ্যে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় চিহ্নিত আসামীরা মেয়েটিকে ছুরিকাঘাত করে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে চারজনে মিলে ছাত্রীটিকে র্ধষণ করে। এসময় তার ছোট বোন পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পায়। পরে দুর্বৃত্তরা ধর্ষিতার বাবা-মাকে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। এসময় তারা বাড়িতে থাকা স্বর্ণালংকার ও এক লাখ ৬০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
রোববার দুপুরে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান, জেলা পুলিশ হলরুমে সাংবাদিকদের সাথে এক প্রেস কনফারেন্সে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটির বর্ণনা দেন। এর আগে সকালে রাজারহাট থানা পুলিশ আসামীদের কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করে। সেখানে শুনানী শেষে পুলিশের পক্ষ থেকে রিমান্ড চাওয়া হলে বিজ্ঞ বিচারক ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন, রাজারহাট উপজেলার ছিনাই গ্রামের উমর আলীর ছেলে আব্দুস সালাম (২৫), লালমনিরহাট জেলার মহেন্দ্রনগর এলাকার করিমের ছেলে আব্দুল মালেক (২৭) ও রাজারহাটের পীরমামুদ গ্রামের মৃত: আব্দুল গফুরের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩২)।
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পর পরই র‌্যাব, সিআইডি, পিবিআই এবং পুলিশ পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত কাজ শুরু করে। কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। এই টিম ব্যাপক অনুসন্ধান এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে প্রথম ক্লু হাতে আসে। তখন তাদের অবস্থান ছিল ঢাকায়। সেখানে তারা রিক্সা চালানোর কাজ যোগার করে। পুলিশ ঢাকায় গিয়ে আসামীদের গ্রেপ্তার করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হতে না হতেই আসামী আব্দুস সালাম ফিরে আসে কুড়িগ্রামে। পুলিশ সালামের সাথে অপর আসামী আব্দুল মালেকের স্ত্রীর পরকীয়ার সূত্র ধরে তাকে সনাক্ত করে। পরে পুলিশের ফাঁদে আটকে পরে সালাম। এরপর আব্দুল মালেক এবং সর্বশেষ আটক হয় আবুল কালাম আজাদ। পুলিশ আসামী আব্দুল মালেককে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর এলাকা থেকে। আসামী আব্দুস সালামকে কুড়িগ্রামের চর ভুরুঙ্গামারী এলাকা থেকে এবং আসামী আবুল কালাম আজাদকে নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের হাজীরমোড় এলাকা থেকে পৃথক পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়।
আসামী আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে রাজারহাট, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে ৫টি চুরির মামলা রয়েছে। এছাড়াও আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট, রাজারহাট ও কুড়িগ্রামে একটি করে ৩টি মামলা রয়েছে। আসামীদের একাধিক স্ত্রী রয়েছে এবং তারা পরকীয়ার সাথে যুক্ত রয়েছে।
কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানিয়েছেন, তিনজন আসামী গ্রেফতার করার পর প্রাথমিক তদন্তে ডাকাতির উদ্দেশ্যে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
উল্ল্যেখ, গত ২৭ জুলাই গভীর রাতে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মহিধর খন্ডক্ষেত্র গ্রামে নবম শ্রেণির ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করে আহত করে এবং বাড়ির পাশে ধর্ষণ করে একদল দুর্বৃত্ত। এছাড়াও দুর্বৃত্তদের হামলায় ধর্ষিতা ছাত্রীর বাবা ও মা গুরুতর আহত হন। এসময় তার বাড়িতে থাকা স্বর্ণালংকার ও এক লাখ ৬০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা। আহত ছাত্রী ও তার পিতা-মাতা এখনো কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় পরদিন অজ্ঞাত পরিচয় ৩ জনকে আসামী করে রাজারহাট থানায় মামলা দায়ের করা হয়। আসামী গ্রেপ্তারের দাবীতে এলাকায় দু’দফা মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!