এই ইন্দিরার পাশে সভা হতো মাওলানা ভাসানীর

আব্দুল খালেক ফারুক:
এই ইন্দিরার পাশে মঞ্চ করে দু’দফা সভা করেছেন মাওলানা ভাসানী। পুলিশের উপস্থিতিতে তীব্র সমালোচনা করেছেন পাকিস্তান সরকারের। সভার দু’দিন আগে থেকে রৌমারী ও ভুরুঙ্গামারীসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাসানীর অনুসারীরা এসে জড়ো হতেন এই বাজারে। মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজরিত কুড়িগ্রাম সদরের খলিলগঞ্জ বাজারের ঐতিহ্যবাহী এই ইন্দিরাটি প্রায় ঢাকা পড়েছে এখন। এর উপর উঠেছে দোকানঘর। আর ইন্দিরাটি ব্যবহৃত হচ্ছে টয়লেটের সেফটি ট্যাংকি হিসেবে।


বেলগাছা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জানান, সম্ভবত ১৯৬৬ সালে প্রথম খলিলগঞ্জে আসেন মাওলানা ভাসানী। এরপর আসেন ১৯৬৮ সালে। জলিল মোক্তার, শুকর উদ্দিন, অ্যাডভোকেট এ জেড এম আসাদ ও নূরুল হুদাসহ কয়েকজন ছিলেন সভার উদ্যোক্তা। ভাসানী জলিল মোক্তারের বাড়িতে থাকতেন। খাওয়া দাওয়াও করতেন। খলিলঞ্জ বাজারের ইন্দিরার পাশে চৌকির উপর মঞ্চ তৈরী হতো। পাশেই টেবিল চেয়ারে পুলিশ বসে থাকতো। আর সভার বিবরণী লিখতো। মাওলানা ভাসানী পুলিশ দেখলেই আরো জ¦ালাময়ী ভাষায় বক্তব্য দিতেন। তিনি আলটিমেটাম দিতেন-৫ মিনিটের মধ্যে সভামঞ্চের পাশ থেকে পুলিশকে সরে যাবার। পুলিশ সরে যেতো। তিনি পশ্চিমা শাসকদের বিরুদ্ধে নানা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে এদের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হবার আহবান জানাতেন।
তিনি বলেন, ‘এখান থেকে রংপুর টাউন হলের কর্মীসভায় সভায় যোগ দেন ভাসানী। আমরা সঙ্গেই ছিলাম। সেখানে ন্যাপ নেতা মশিউর রহমান যাদু মিয়া ও শ্রমিক নেতা জসিম মন্ডলসহ অনেকেই ছিলেন। ভাসানী অত্যধিক গরমে ডায়াসের উপর পাঞ্জাবী খুলে রেখে বক্তব্য দেন। তাকে ‘চীনের দালাল’ বলায় সভায় তিনি অনেক দু:খ প্রকাশ করেন এবং এক পযায়ে কেঁদে ফেলেন।’
বাজারের ব্যবসায়ী ও কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক কমিশনার আমিনুর রহমান আলম জানান, খলিলগঞ্জ বাজারে তখন দোকান পাট ছিলো চটের বস্তা আর খড়ের ছাউনির। সভা আয়োজনের সময় এসব দোকান খুলে সরিয়ে রাখা হতো। লাঠি আর লাল পতাকা নিয়ে মাওলানার হাজার হাজার অনুসারীরা আসতেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। রৌমারী ও ভুরুঙ্গামারী থেকে আসতেন বেশী। তার বক্তব্য শোনার জন্য সাধারণ মানুষও জড়ো হতো। সভা শেষে ট্রেনে বা হেঁটে তিনি অন্য গন্তব্যে চলে যেতেন।
তিনি বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি একজন পীর টাইপের লোক ছিলেন। তাঁর আগমনের খবর পেয়ে প্রচুর লোক আসতেন পানি পড়া নিতে। জলিল মোক্তারের বাড়িতে থাকার সময় পানি পড়া নিতে প্রচুর ভিড় দেখা গেছে।’
খলিলগঞ্জে সভা ও মাওলানা ভাসানীর আগমণের স্মৃতিচারণ করে কুড়িগ্রামের প্রবীণ আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট এনামুল হক চৌধুরী জানান, অতি সাধারণ জীবন যাপন করতেন মাওলানা ভাসানী। মাইলের পর মাইল হাঁটতেন। কয়েকদিন হয়তো গোসল করা হতো না। খাবারের প্রতি ছিলো মাওলানা ভাসানীর প্রবল দুর্বলতা। তবে যে কোন খাবার খেতেন। দুধ কলা দিয়ে ভাত মেখে খেতেন। মাগুর মাছ পছন্দ করতেন। তিনি সত্যিকারের একজন জনদরদী ও নিরহংকার নেতা ছিলেন।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!