কুড়িগ্রামে বন্যায় ২৪৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট: ক্ষতিগ্রস্থ ২ লাখ কৃষক

আব্দুল খালেক ফারুক:
কুড়িগ্রামে পাঁচ দফা বন্যায় ২১ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার কৃষক পরিবার। ক্ষতির পরিমাণ ২৪৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। চড়া সুদে নেয়া দাদনের টাকায় আমন রোপন করে এখন নি:শ্ব অনেক ক্ষুদ্র কৃষক ও বর্গা চাষী। ক্ষতি পোষাতে রবি শস্য চাষের জন্য সরকারি সহায়তার আশায় তাকিয়ে আছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামে পরপর পাঁচ দফা বন্যায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন, সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির আউস ও এক হাজার হেক্টর জমির বীজতলাসহ ২১ হাজার ৪৪৩ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। মোট ক্ষতির পরিমান ২৪৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে ৯৭ কোটি ৮২ লাখ টাকার আমন, ৪৬ কোটি ৬২ লাখ টাকার আউস, ১৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বীজতলা ও ৪১ কোটি ১৯ লাখ টাকার সবজি রয়েছে।
আগাম বন্যায় বীজতলা নষ্ট ও পুঁজির অভাবে আমন আবাদ নিয়ে সংকটে পড়েছিলেন কৃষকরা। তারপরেও চড়া সুদে দাদন ও আর ধার-কর্জ করে আমনের আবাদ করেছিলো অনেক ক্ষুদ্র কৃষক ও বর্গা চাষী। কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যা তাদের শেষ স্বপ্নটুকু নি:শেষ করে দেয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ফুলবাড়ী উপজেলার চর বড়লই গ্রামের বগাচাষী বাদশা মিয়া জানান, দিনমজুরি আর রিকশা চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে আরো ৫ হাজার টাকা দাদন নিয়ে ৪ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছিলেন। শেষ দফা বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। একই গ্রামের কৃষক শামসুল আলম আমনের চাড়া কিনে ১২ হাজার টাকা খরচ করে এক একর জমিতে আমন চাষ করে এখন নি:শ্ব। তার ক্ষেতের ফসল এখন কাদায় পানিতে লুটোপুটি কাচ্ছে।
চরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, বাজারে ধান চালের চড়া দাম আর কাজের অভাবে ক্রয় সংগতি হারিয়ে ফেলেছেন তারা। ঘরে সামান্য চাল রয়েছে কারো কারো। কেউ কেউ মোটা চাল ৪৩ টাকা কেজিতে কিনছেন। ফলে ধার দেনা ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের আগামীতে বোরো বা রবিশষ্য চাষের সামর্থ্য নেই। তাই ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা মনে করেন, রবি শস্য চাষে সরকারি প্রণোদনা পেলে তারা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামের কৃষক গাজীবর বলেন, ‘বাঁন্ধ ভাঙি যায়য়া হামার সউগ ক্ষ্যাত বানে খায়য়া গেইছে। এলা সরকারি সাহায্য না করলে হামরা কিছু আবাদ করব্যার পাবার নই।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক মো: আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, সরকারিভাবে বেশ কিছু কৃষককে আমনের চারা সহায়তা দেয়া হলেও শেষ দফা বন্যায় তাও নষ্ট হয়েছে। এখন নতুন করে আমন চাষের সময় নেই। তাই রবি শস্যে প্রণোদনা দিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে চাষীদের মাঝে তা সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হবে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!