অনার্স পাশ করেও বেকার বামন মানব সজীব

অনিল চন্দ্র রায়. ফুলবাড়ী:
উচ্চতা মোটে সোয়া ৩ ফুট। সংসারের অভাব-অনটন, পা বাঁকা ও বামন মানুষ হলেও উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছেন সজীব মিয়া। কিন্তু শত বাঁধা পেরিয়ে অনার্স পাশ করেও চাকুরি না পেয়ে হতাশ বামন মানব সজিব। ২০১৯ সালে লালমনিরহাট সরকারি কলেজে দর্শন বিভাগে অনার্স পাশ করেন শারিরিক প্রতিবন্ধী সজীব মিয়া। বাবার মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মাসহ তিন জনের সংসারের হাল ধরতে হয় এই শারীরিক প্রতিবন্ধি সজীবকে। শত-শত কষ্ট আর হাজারো কুটুক্তি সহ্য করেও থেমে যাননি সজীব মিয়া।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি কলাবাগান ধরলা নদীর প্রত্যন্ত চরাঞ্চল এলাকার মৃত জিন্নাত আলীর ছেলে সজীব মিয়া। অসুস্থ জনিত কারণে সজিবের বাবা পাঁচ বছর আগে মারা যায়। বাবার মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মা ফাতেমা বেওয়া (৫৮),ছোট ভাই ফেরদৌস আলীসহ সজীবের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। অভাব আর নানা বাঁধা উপেক্ষা করে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে।


প্রতিদিন তিন থেকে চার কিলোমিটারের পথ হেঁটে টিউশনি পড়াতে বেড়িয়ে পড়েন। টিউশনির আয় মাত্র মাসে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা। এই সামান্য আয়েই একদিকে সংসারসহ ছোট ভাই আর নিজের পড়াশুনার খরচ জোগাতে চরম অর্থ সঙ্কটেই দিন কাটে। খেয়ে না খেয়ে পড়াশুনা করে স্বপ্ন আঁকেন সজীব মিয়া। শারিরিক উচ্চতা কম থাকায় বউ না পাওয়ার শংকায় সজীব ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে খালাতো বোন শিরিনাকে বিয়ে করেন। সজীবের সংসারে রয়েছেন স্ত্রী,নবম শ্রেণি পড়–য়া ছোট ভাই ও মাসহ চার জনের সংসার। সংসারের সকল দায়িত্ব এই সজীবের ঘাড়েই। জমিজমা বলতে ভিটেমাটিসহ তিন বিঘা জমি রয়েছে। এরমধ্যে সংসারের অভাবে কারণে বছর তিনেক আগে দেড় লাখ টাকায় দু’বিঘা জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে।
সজীব মিয়া বলেন, ‘পড়াশোনা করার সময় অনেক বাঁধা আর মানুষের বিভিন্ন ধরনের কুটুক্তি শুনতে হয়েছে। এসব কিছু কান না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়েছি। বর্তমানে করোনার কারনে ৮/১০ জন শিক্ষার্থীকে টিউশনি পড়াচ্ছি। সংসারের আয়ের উৎস বলতে টিউশনী, নিজের প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মায়ের বিধবা ভাতা। সংসারে মায়ের কয়েকটি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী লালন-পালন করেই তা দিয়েই টানা পোড়েনের মধ্যে আমাদের সংসার চলছে। মাঝে মধ্যে ছোট ভাই ফেরদৌস দিনমজুরির কাজ করে সংসারে যোগান দেয়। মা আমাকে অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা করিয়েছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় টিউশনি পড়িয়ে সরকারি চাকরির খোঁজখবর রাখা মুশকিল।’
শারিরিক উচ্চতারও জন্য নিজেই অস্বস্তিতে দিন রাত কাটাতে মানষিকভাবেই বিধ্বস্ত সজীব। মায়ের মুখে হাসি ফোঁটাতে আর ছোট ভাইকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য একটি চাকুরির প্রয়োজন। সজীবের দাবী, প্রতিবন্ধি কোটায় সরকার তাকে একটি সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করে দিলে আমার অসহায় পরিবারটির একটা স্থায়ী সমাধান হতো। পড়াশুনার পাশাপাশি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন সজীব।
সজীবের মা ফাতেমা বেওয়া জানান,বাপ মরা ছেলেটাকে খেয়ে না খেয়ে নেখাপড়া শিখাইছং। কষ্ট করি মোর প্রতিবন্ধি ছেলেটাই সংসারের হাল ধরেছে ওর বাপ মারা যাবার পর থাকিয়া। ছোট ছেলেটাও ভাইয়ের কষ্ট দেখে এই বয়সে কামলা খাটিয়া সংসারের জোগান দেয়। সরকার যদি মোর বেটার জন্য একটা সরকারি চাকরি দেইল হয় হামার পরিবারটি বাঁচিল হয়।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.মুসাব্বের আলী মুসা জানান, ইতিপূর্বে সজীবকে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে অসহায় প্রতিবন্ধী সজীবের একটা চাকুরির খুবেই দরকার। চাকুরিটা হলে তার পরিবারের একটা স্থায়ী সমাধান হতো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুর রহমান জানান, বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন হতে তাকে চাকুরি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে সজীব যদি সরকারী-বে-সরকারী চাকুরির জন্য কোথাও অবেদন করে তাহলে যোগ্যতা ও প্রতিবন্ধী কোটায় চাকুরির জন্য সহযোগীতার আশ্বাস দেন।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!