একজন বঙ্গবন্ধু ভক্তের আখ্যান ‘শেখ সাহেবের ভক্ত’

সাজেদুল করিম সুজন:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ৬৪ জেলায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মভিত্তিক নাটক মঞ্চায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৪ এপ্রিল রাতে কুড়িগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির নাট্যদল স্থানীয় শেখ রাসেল পৌর অডিটরিয়ামে পরিবেশন করে নাটক ‘শেখ সাহেবের ভক্ত’। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন আব্দুল খালেক ফারুক।
নাটকটিতে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঘটনাক্রম তুলে ধরা ছাড়াও বঙ্গবন্ধু জন্য একজন ভক্তের আকুতি, সংগ্রাম আর ভালোবাসার কথা বিধৃত হয়েছে। নাটকে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০ এর নিবার্চন, মুক্তিযুদ্ধ, পাকবাহিনী ও দোসরদের অত্যাচারের পাশাপাশি ৭৫এর বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর তার এক ভক্তের প্রতিবাদের কথা ধবনি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক দর্শক নাটকটি উপভোগ করেন।
নাটকটিতে পালা, নাটক ও গীতিনাট্যের সমন্বয়ে এক অনবদ্য সুরের মূচ্ছর্নায় আপ্লুত হবার বিষয় ছিলো। গান, অভিনয় ও কোরিওগ্রাফির যথাযথ ব্যবহারে মুন্সিয়ানার পরিচয় ছিল নির্দেশকের। বিশেষ করে ট্রেন, গরুর গাড়িসহ বেশ কিছু প্রপস্ এর ব্যবহার, আলোকসম্পাত ও কোরাস গানের মূচ্ছর্তা মুখরিত করে রাখে মঞ্চকে। বিশেষ করে ভাওয়াইয়া গানের সুরের বৈচিত্র্য আর রিদম মনে কেড়ে নেয় দর্শকদের।
নাটকের কেন্দ্রিয় চরিত্র নুর আলীর ভূমিকায় দুলাল চন্দ্র বর্মনের অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের মোহিত করে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার হৃদয়ের মর্মবেদনা ধবনি হয় দর্শকদের মর্মে মর্মে। কেউ হয়ে ওঠেন অশ্রম্নসজল। এছাড়া সুত্রধরের চরিত্রে নাজমুল হুদা, মোকছেদ চরিত্রে আমিনুল ইসলাম ও কফিল মিয়ার চরিত্রে মো: শাহআলম ভালো করেছেন। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে ডালিম কুমার ভালো করার চেষ্টা করেছেন।
নাটক মঞ্চায়নের আগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিঙ্কন, জেলা কালচারাল অফিসার মো: ফয়েজ উল্লাহ, প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুজ্জামান বাবু, সাংবাদিক শফি খান, সংগীত শিল্পী ভূপতি ভূষণ বমার্, নাট্যকার ও নির্দেশক আব্দুল খালেক ফারুক।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন, ডালিম কুমার, নাজমুল হুদা, দুলাল চন্দ্র বর্মন, মো: শাহ আলম, আমিনুল ইসলাম. শাহনাজ আহমেদ, শফিকুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, নারায়ন চন্দ্র সরকার, রোকন বাবু, সুমিত সেন, আতিক হাসান, আতিকুর রহমান, শাহিন আলম, রাতুল ও প্রশান্ত প্রসাদ স্বর্ণকার।
নাটকের সংগীত পরিচালনায় ছিলেন নাজমুল হুদা, শিল্প নির্দেশনায় চারুসোনা রায়। কোরিওগ্রাফি করেছেন আতিক হাসান। সুর সংযোজন করেছেন অনন্ত কুমার দেব ও এসএম মজিবর রহমান। নাটকের সহকারী নির্দেশক প্রশান্ত প্রসাদ স্বর্ণকার, প্রযোজনা অধিকতার্ রাশেদুজ্জামান বাবু।
অনেক দিন পর কুড়িগ্রামের মঞ্চে একটি মৌলিক নাটকের মঞ্চায়ন, তাও আবার বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহানায়ককে অবলম্বন করে। ফলে নাট্যপ্রেমী দর্শকদের বাড়তি আগ্রহ ছিল নাটকটি ঘিরে। প্রথম প্রদর্শনীর ত্রুটি বিচ্যুতি কাটিয়ে আগামীতে নাটকটি আরো মঞ্চ সফল হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!