কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে ফিরে আসছে কাউন চাষ

বিভাস প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের কৃষকরা আবারও কাউন চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্রের চরে চরে কাউনের সমারোহ। চরের বালুকাময় জমিতে সহজে কাউনের আবাদ হয় বলে বলে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন কাউন চাষে। ফলনও হয়েছে ভালো। তবে কারো কারো ক্ষেতে পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ফসল। চরের কৃষকরা জানান, কৃষক বিভাগ প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিলে চরের জমিতে কাউন চাষের বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে সাড়ে ৬শত হেক্টর জমিতে কাউনের আবাদ করা হয়েছে। প্রায় একযুগ ধরে এসব এলাকায় কাউনের আবাদ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল। গত বছর থেকে কৃষকরা পূণরায় কাউন আবাদ শুরু করে। ভাতের বিকল্প হিসেবে এবং কাউনের পায়েস এই এলাকার জনপ্রিয় খাবার। এছাড়াও পশু—পাখি এবং বিভিন্ন খাদ্য পণ্যে কাউন ও কাউনের চাল ব্যবহার করা হয়। জেলা কৃষি অফিস কাউনের আবাদ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আধুনিকজাতের বারী কাউন—৩ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করে।
উলিপুরের বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বিন্দুর চরের কৃষক সাবেক ইউপি সদস্য বিন্দু বলেন, ‘এ বছর আমি দেড় একর জমিতে কাউন চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় দিন দিন চরাঞ্চলের চাষিরা দিকে ঝঁুকে পড়ছেন। কৃষকরা এ বছর বাজারে কাউনের কাঙ্খিত দাম পেলে আগামী চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে কাউন চাষে উদ্বুদ্ধ হবে।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ফারাজী পাড়া গ্রামের কৃষক ছামাদ আলী (৬৫) ও মোক্তার আলী (৫৫) ২বিঘা করে ৪ বিঘা জমিতে কাউন চাষ করেছেন। বিঘায় খরচ ৪ হাজার টাকা। উৎপাদন হয় ৭ থেকে ৮মন। প্রতিমন কাউনের মূল্য ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা হলে বিঘায় ৯হাজার টাকার কাউন বিক্রি করা যায়। এতে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে এবার মোক্তার আলীর ২ বিঘা জমির মধ্যে ১৬ শতক জমিতে পোকার আক্রমণ হয়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার জানান, বাপ—দাদার আমল থেকে চরাঞ্চলে লাভজনক ফসল কাউন চাষ করা হলেও গত এক যুগ ধরে কাউন আবাদ বন্ধ করে দিয়েছে চরাঞ্চলের কৃষকরা। এই ইউনিয়নে গত দুই বছর থেকে বিলুপ্ত প্রায় কাউনের আবাদ শুরু হয়েছে। এবার দেড়শ একর জমিতে আবাদ হলেও এর ৩০ভাগ পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি বিভাগ সঠিকভাবে দেকভাল করলে কৃষক আবার কাউন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে জানান এই জন প্রতিনিধি।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হক জানান, চরগুলোর মাটি কাউন, চিনা, সরগম আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। এবার কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে আধুনিকজাতের বারী কাউন—৩ কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। যাতে অভাবের ফসলগুলো উচ্চ মূল্যের ফসলে পরিণত হয়। স্থানীয়জাতগুলোতে কিছুটা পোকার আক্রমণ হয়েছে। পোকা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে এই কর্মকর্তা জানান।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!