বাণিজ্যিক পেঁপে চাষ, ৫ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন চাষী

সাইমুল ইসলাম সাজু:  কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে পেঁপে চাষ করছেন সুভাষ চন্দ্র। তিনি একজন প্রান্তিক পেঁপে চাষী। গতবছর ৩০ শতক জমিতে ২৫০টি হাইব্রিড পেঁপে চারা রোপণ করলেও পাননি আশানুরূপ ফল। ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রভাবে প্রতিটি চারা লন্ড ভন্ড হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। গুনতে হয় হাজার বিশেক ক্ষতির হিসাব। কিন্তু পেঁপে চাষের পিছু ছাড়েননি সুভাষ। 
গতবছর পেঁপে চাষের জায়গাটি নিচু হওয়াতে ভাইরাস ও পানি জমে নষ্ট হয়েছিল অধিকাংশ পেঁপে গাছ। নতুন পেঁপে চাষী হওয়ায় বুঝতে পারেনি কি করবেন। সেসময় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেও পাননি সুপরামর্শ।  
এবছর লীজ নেওয়া ১ বিঘা জমিতে রোপন করেন নিজের তৈরিকৃত পেঁপের চারা। এবার ১ বিঘায় ৩২০ টি চারা রোপন করেছেন। সবগুলো গাছেই এসেছে ফুল-ফল। গাছের সাইজ ৩ থেকে ৫ ফিটের মধ্যে হলেও ফল ধরেছে দেড় ফিটে। পেঁপে গাছে এমন ফল ফুল দেখে মুখে হাসি ফুটেছে পেঁপে চাষী সুভাষ চন্দ্রের। 
অন্যান্য ফসলের থেকে পেঁপে চাষে তুলনামূলক ব্যয় খুব কম। ব্যয়ের তুলনায় আয়ের পরিমাণ সবসময় বেশি থাকে। পেঁপে বাগানে সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত তার ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে সবমিলিয়ে আরো ১০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে বলে জানান সুভাষ। 
সুভাষ চন্দ্র জানান, একটি প্রাপ্ত বয়স্ক  গাছ থেকে দেড় থেকে দুই বছরে গড়ে ১০০ কেজি পেঁপে সংগ্রহ করা যাবে। স্থানীয় বাজারে বর্তমান পেঁপের মণ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁপে ১৭.৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয় আড়ৎ গুলোতে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।  সেই হিসাবে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন পেঁপে চাষী সুভাষ। 
পেঁপে চাষী সুভাষ চন্দ্রের বাড়ি   রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের সিংহীমারী গ্রামে। তিনি তার নিকট আত্মীয় শিবুর কাছ থেকে জমি লীজ নিয়ে পেঁপের বাগান করেন। তিনি এবছর দেশীয় লালতীর কোম্পানির হাইব্রিড পেঁপে বাবু জাত ও তাইওয়ানের রেড লেডি জাতের পেঁপের চাষ করেন। বাবু জাতের পেঁপে দেখতে কিছুটা গোলাকৃতির হলেও রেড লেডি জাতের পেঁপে লম্বাটে। রেড লেডি জাতের পেঁপের ওজন  ১ কেজি থেকে  ৩ কেজি হয়ে থাকে। প্রতিটি পেঁপের গড় ওজন দেড় কেজি।  
উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত পেঁপে বাগানের দেখভাল  ও পরামর্শ দিচ্ছেন ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিয়াকত আলী। তিনি জানান, সুভাষ গতবছর পেঁপের বাগান করে। আমফানের প্রভাবে ক্ষতি হয়। এবারও ১ বিঘা জমিতে বাবু ও রেড লেডি জাতের হাইব্রিড পেঁপে চাষ করেছেন। আশা করছি এবার ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন। আমরা  সার্বক্ষণিক সুভাষকে পরামর্শ দিচ্ছি এবং পেঁপে বাগানের খোঁজ খবর রাখছি । 
এসব হাইব্রিড জাতের পেঁপে চারা রোপণের ৬০-৭০ দিন পর থেকে ফুল আসা শুরু করেছে। রোপণের তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যেই প্রতিটি পেঁপে গাছে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি করে পেঁপে ধরেছে। বর্তমানে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সবুজ দৃষ্টি নন্দন পেঁপে ধরেছে তার গাছে। কম খরচে এমন ফলন ফলিয়ে যে কেউ এক বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে হবে লাখপতি। রোপণকৃত গাছ থেকে বছরে ৪ থেকে ৫ বার পেঁপে সংগ্রহ করা যাবে। এখানে কাঁচা পেঁপে পাইকারি মূল্যে কেজি ১৭-২০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপে বিক্রি লাভজনক। প্রতিটি পাকা পেঁপে গড়ে ৫০-৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।
রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. সম্পা আক্তার বলেন, “রাজারহাটে  পেঁপে চাষ ততটা এগোতে পারেনি।  কারণ এখানে বন্যা বেশি হয়। বৃষ্টির পানি জমে থাকে। পেঁপে কিন্তু পানি সহ্য করতে পারে না। তারপরও সবজি হিসাবে আমাদের অনেক কৃষক চাষাবাদ করছে। আরো কেউ পেঁপে চাষে করতে চাইলে আমাদের থেকে কারিগরি ও সার্বক্ষণিক সুপরামর্শ অব্যাহত থাকবে।” 

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!