তিস্তার গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে গতিয়াশাম

সাইমুল ইসলাম:
তিস্তা নদীর আগ্রাসী ভাঙনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের গতিয়াশাম গ্রাম। তিস্তার পানি কমার সাথে সাথে রগ্ন রুপ ধারণ করে তিস্তা তার ভাঙনের তান্ডব চালায় গতিয়াশাম, বগুড়াপাড়া, মন্ডলপাড়া, খিতাবখাঁ সহ বেশ কিছু গ্রামে। বগুড়াপাড়া এখন নদীগর্ভে বিলীন। নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে বগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ কয়েকদিনের ব্যবধানে হাজারের বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে ঠাঁই নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে।

গতিয়াশাম যাওয়ার পথে রাস্তার দুধারে সারি সারি ঘরের চালা দেখা যায়। ঘরের চালার সাথে আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র। তিস্তার ভাঙন থেকে ঘরের জিনিসপত্র, মালামাল রক্ষা করে রাস্তায় রাস্তায় রেখেছেন তিস্তায় ভাঙনের শিকার পরিবার গুলো। বসতভিটা হারানোর পর থাকা ঘরের অভাবে উপযুক্ত মেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক বাবা—মা। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে তাদের কিশোরী মেয়েদের পাঠিয়ে চিন্তা মুক্ত নন তিস্তাপাড়ের অনেক বাবা—মা। এদিকে আহাজারিতে ভারি তিস্তা পাড়ের বাতাস। প্রতিনিয়ত ভাঙন চলছে সেখানে। বসতভিটা হারানো এসব পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার মত কেউ নেই। তারপরও দেখা মিলছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

তিস্তার পানি কমার সাথে সাথে গ্রামবাসীর যৌথ উদ্যোগে বাঁশ, টাকা সংগ্রহ করে বাঁশের পাইলিং করছেন স্থানীয়রা। তিস্তার ভাঙন প্রতিরোধে স্বেচ্ছায় এলাকার লোকজন এ কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর দাবি, “দ্রত তিস্তা পাড়ের মানুষকে বাঁচাতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হোক”

ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোখলেছুর রহমান জীবিত থাকার সময় তার বাড়ি পর্যন্ত সড়ক পাকা করে দেওয়া হয়। তার আর্থিক অবস্থা বেশ ভালো ছিল। তার ছেলে মেয়ে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত। এবছর তিস্তার আগ্রাসী ভাঙনে পাকা সড়কটি তিস্তায় হারিয়ে গেছে। হুমকিতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি।

কমান্ডারের ভাই নবীজ উদ্দিন (৮০)। তার বাড়ির সীমানায় তিস্তা জানান দিচ্ছে ভিটেমাটি ছেড়ে যাবার। তাই ঘর, জিনিসপত্র সহ অন্যান্য মালামাল ভাতিজা লাজু সরকারের বাড়িতে, হাটখোলায় রেখেছেন। যেকোন মুহূর্তে তিস্তায় হারিয়ে যেতে পারে তার বসতভিটে। তাই আবেগ আপ্লূত হয়ে শেষ ভিটা হারিয়ে যাওয়া দেখছেন আর চোখের জল ফেলছেন।

গতিয়াশাম গ্রামের নুর মোহাম্মদের স্ত্রী আঞ্জু আরা বেগমের সাথে কথা হয়। দীর্ঘসময় ঢাকায় কাজ করে সংসার গড়ে তুলেছেন। ৪ ছেলে মেয়ের মধ্য এখনো দুজন ঢাকায় কাজ করে। এখন ছেলেরা সংসারের হাল ধরেছেন। তার সুখেই দিন কাটতেছিল। ১ বছর আগে ১২ শতক জমি কিনেছেন ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে। এখনো সেই জমি ভোগ করতে পারেননি। তার আগেই ২৪ শতক ধানের জমি তিস্তার ভাঙনে নদীতে চলে যায়। ১ বছর আগে কেনা জমিও তার এখন আর নেই। বাকি ৭ শতক বসতভিটা তাও যায় যায় অবস্থা। তিস্তায় কেড়ে নিল সব।

তিস্তায় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও অনেকটা ধীর গতির কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। এবছর হাজারের বেশি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। এবছর বন্যার শুরু থেকেই তিস্তা অগ্রাসী ভা বেই ভাঙন শুরু করে। অন্যবার জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট ভাঙনের সংবাদ পেলেও এবছর তিস্তায় স্বরণকালের ভাঙনের তান্ডব দেখে তিস্তা পাড়ে মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে জানা যায়, তিস্তা নদীর ভাঙন রোধ এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এটি বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে তিস্তার ভাঙন রোধে অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব দিয়ে রোধ করার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!