ইসরাত জাহান ইতি:
আমরা প্রত্যেকেই প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতিই একমাত্র জাগতিক শক্তি। প্রকৃতির কোলেই বেড়ে উঠেছে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অজস্র প্রাণ। গতকাল একঝাঁক প্রকৃতি প্রেমীদের দেখে আমি সত্যি অভিভূত। আমি মন থেকে চাইবো এনারা সবাই যেন সত্যিকারের প্রকৃতিপ্রেমী হয়।
কাল কাশবনের ছবি আপলোড দেয়ার পর থেকে এত এত প্রকৃতি প্রেমীদের দেখা মিললো। তা সত্যি অভিভূত করার মতো। আমিও জীবনে প্রথম বারের মত কাল কাশবনে গিয়েছিলাম। অভিজ্ঞতা ভীষণ অন্যরকম। সেই ছোট্ট বেলা থেকে “বাংলাদেশের ষড়ঋতু” রচনা লিখতে গিয়ে শরৎকালের সৌন্দর্য বর্ননা করেছি। কাশফুল অনেক দেখেছি বটে তবে কাশবন দেখা এবং এই স্নিগ্ধ সুন্দর কাশবনের বুকে হাঁটা জীবনে প্রথমবার। কি অদ্ভুত অনেকেই দেখি এই কাশবন সামনাসামনি দেখে নি এবং তাদের দেখার কি আকুতি মিনতি। কাল সকলের মেসেজ তাই বলছিলো। বিশেষ করে যে আমার বান্ধবীরা। কাল বলিনি এমনি জাস্ট একটু মজা নিলাম। অনেক বান্ধবী বলছিলো আমি হিংসুটে। যারা আমার কাছে লোকেশন জানতে চেয়েছেন এবং চান তাদের জন্য লিখছি।
কাশফুল সাধারণত নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো রুক্ষ এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদী ও খালের ধারেই এদের বেশি জন্মাতে দেখা যায়।এই দিগন্তজোড়া শুভ্র কাশফুলের সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করে কাশফুলের নরম ছোঁয়ায় মনে প্রশান্তি আস, সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
লোকেশন:
পাটেশ্বরী বাজারের খুব নিকটেই আপনি খুঁজে পাবেন কাশবন। যেখানে গেলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। চারপাশে দিগন্ত বিস্তৃত কাশবন। টলটলে নদীর খাল। ঠিক খালের ধার ঘেঁষেই অযতেœ বেড়ে উঠেছে প্রকৃতির অপার এই বিস্ময়কর ফুল।
কুড়িগ্রামের অর্থাৎ কুড়িগ্রাম শহর থেকে পাটেশ্বরীর ভোগডাঙা ইউনিয়নের পাশে পশ্চিমে সুইচগেটে গেলেই মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। কুড়িগ্রামে আশেপাশে বেড়ানোর জন্য ভ্রমণের নতুন গন্তব্য হয়েছে এটি। পাটেশ্বরী এলাকার সুইচগেটের পাশে সারিঘাটের অবস্থান।
শরতের বিকেলে অনেকেই সারি ঘাটে আসেন কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। আর ছুটির দিনে এখানে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামে। সেখানে গেলে অনেক পর্যটকরাই স্বচ্ছ পানির খালে নেমে গোসল সেরে নেন।
এখানে ভ্রমণের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো কাশবন। বর্ষায় খালের পাড়ের বালিয়ারিতে কাশফুল ফোটে। শান্ত পরিবেশে প্রকৃতির কোলে কিছুটা সময় কাটাতে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় জমায় সারি ঘাটে।
কীভাবে যাবেন আপনার সেই গন্তব্যে:
প্রথমেই অটো দিয়ে অথবা যেকোনো যানবাহন যোগে যে যার অবস্থান থেকে পাটেশ্বরী বাজারে যাবেন। তারপর পাটেশ্বরী বাজারের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটা রাস্তা আছে,সেটা পশ্চিম দিকে গেছে।ওই রাস্তায় ১/২ মিনিট হাটলেই নদী।তারপর নৌকা দিয়ে যেতে হবে নদীর ওপার অর্থাৎ চরে।চরেই আপনাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য কাশবন। এছাড়া আমাদের কুড়িগ্রামে বহু চর রয়েছে। যেকোনো চরে গেলেই এই কাশবনের দেখা মিলবে।
সতর্কতা: প্রথমেই আবহাওয়া অবলোকন করে যাবেন। চরে ভীষণ গরম। ওখানে সূর্যের তাপ অতিব তীব্র। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে গেলে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে। ছাতা, ও পানি অবশ্যই সাথে রাখবেন।আর কাশফুলের গোড়া খুব ধারালো। তাই সাবধানে হাঁটবেন।
সর্বশেষ ঘোষনা: প্রকৃতি আমাদের সকলের। আমাদের সকলের অধিকার আছে প্রকৃতিকে উপভোগ করার। চলুন সবাই প্রকৃতির বন্দনায় নিয়োজিত হই এবং চিনে নেই অন্তরের প্রাকৃতিক সত্ত্বাকে।
বিশেষ অনুরোধ: আসুন ছবি তোলা এবং ফটো সেশন করার চক্করে প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য তথা জাগতিক সৌন্দর্য কে নষ্ট না করি।