মাল্টার চাষে মোস্তফার বাজিমাত

সাইমুল ইসলাম
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন বোর্ডের হাট তালতলা গ্রামের মোস্তফা কামাল। তার এই মাল্টা বাগান দেখতে দুর দুরান্ত থেকে অনেকে আসছেন ও মাল্টা বাগান করার কথা ভাবছেন।

পাকা রাস্তা সংলগ্ন এক বিঘা জমিতে দুই বছর আগে ৫০টি পেয়ারের চারা রোপণের পাশাপাশি ৪০টি মাল্টার চারাও রোপণ করেছেন মোস্তফা। গাছ লাগানোর প্রথম মৌসুমে মাল্টার ফলন আশানুরূপ না হলেও দ্বিতীয়বার মাল্টার ভালো ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে মাল্টা বাগানি মোস্তফা কামালের মুখে।

মোস্তফার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, একটি গাছে ২০—৪০টি করে মাল্টা ঝুলছে। মাল্টার ওজনে নুইয়ে পড়েছে বেশির ভাগ গাছ। এসময় বাগানের পরিচর্যাকারী স্থানীয় বাসিন্দা খতিবর রহমানের সঙ্গে মাল্টা বাগান পরিচর্যা বিষয় নিয়ে কথা হয়। বাগানের পরিচর্যাকারী খতিবর রহমান বলেন, ‘মোস্তফা ভাইয়ের এই মাল্টা বাগানের পাশেই আমার নার্সারি। নার্সারি দেখাশোনার পাশাপাশি আমি মাল্টা বাগানেরও পরিচর্যা করি।’

তিনি আরো জানান, মাল্টার গাছ লাগানোর পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি এক মণ মাল্টা বিক্রি করেছেন। আশা করি আরও ৫—৭ মণ মাল্টা বিক্রি করবেন। তবে নাগেশ্বরী উপজেলায় এটিই প্রথম মাল্টা বাগান। অনেক লোকজন দূর—দূরান্ত থেকে আসেন এই মাল্টা বাগান দেখতে।’

বাগান দেখাশোনা করতে আসা চাষি মোস্তফার ছেলে স্কুল পড়ুয়া মিরাজ হাসান (১২) বলেন, “এটি আমার বাবার তৈরি মাল্টা বাগান। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মিত বাগানে এসে মাল্টা গাছের পরিচর্যা করি। মাল্টা বাগানে এলে আমার খুবই আনন্দ লাগে। বাগান থেকে আমার বাবা কিছু মাল্টা বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি পরিবারের সবাই আমরা এই বাগানের মাল্টা খাই। আশা রাখি বাবা এই বাগানের মাল্টা বিক্রি করে স্বাবলম্বী হবে।”

মাল্টা বাগানে ঘুরতে আসা স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, “আমি সুযোগ পেলেই এই বাগানে ঘুরতে আসি। এই প্রথম এলাকায় এতো সুন্দর একটি মাল্টা বাগান হয়েছে। বাগানে ঢুকলেই গাছ ভর্তি মাল্টা দেখে খুবই ভালো লাগে। তবে মোস্তফাকে অনুসরণ করে পাশের গ্রামেও একজন মাল্টা চাষ শুরু করেছেন।”

মাল্টা চাষি মোস্তফা কামাল (৪৫) জানান, ২০১৯ সালে উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম মাসুদ রানার পরামর্শে মাল্টা চাষ শুরু করি। এক বিঘা জমিতে ৫০টি থাই পেয়ারের চারা রোপণের পাশাপাশি ৪০টি বারি—১ মাল্টার চারাও রোপণ করি। ওই বছর মাল্টার ফলন ভালো না হওয়ায় মাল্টা ছিড়ে ফেলে দিতে বাধ্য হই। তবে এ মৌসুমে প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত মাল্টা ধরেছে। ইতিমধ্যে ১৩০—১৫০ টাকা কেজি দরে বাগানের ৬০ কেজি মাল্টা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছি।

তিনি আরও বলেন, “যদি হলুদ মাল্টার আমদানি কমিয়ে ক্রেতাদের গ্রিন মাল্টার চাহিদা বাড়ানো যায় তাহলে আমার মতো অনেক কৃষকই গ্রিন মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের উন্নতি করতে পারবে।”

জানা যায়, দুই বছর আগে উপ—সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম মাসুদ রানার পরামর্শে কৃষক মোস্তফা কামাল বারি—১ মাল্টা প্রদর্শনী প্লট তৈরি করেন। মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়া যায় কৃষি কর্মকর্তার দেয়া এমন ধারণা থেকে তিনি উদ্যোগ নেন মাল্টা চাষের। তিনি নিজের ১ বিঘা জমিতে বারি—১ জাতের ৪০টি চারা গাছ দিয়ে মাল্টার বাগান শুরু করেন। তার কাজে উৎসাহ দিতে কৃষি অফিস থেকে এসব মাল্টার চারা ও সার বিনা মুল্যে সরবরাহ করা হয়।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলাজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে গ্রিন মাল্টা চাষ করেছেন কৃষকরা। গত মৌসুমে জেলায় ৯ মেট্রিক টন মাল্টা চাষ হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে মাল্টা চাষ আরও সম্প্রসারণ হওয়ায় জেলাজুড়ে ৯ হেক্টর জমিতে গ্রিন মাল্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। যদিও মাল্টা চাষের কোন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত নেই।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!