কুড়িগ্রামে অযত্নে পড়ে আছে মাওলানা ভাসানীর বাড়ি

আব্দুল খালেক ফারুক:
মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর একটি বাড়ি রয়েছে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর কামাত আঙ্গারিয়া গ্রামে। মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজরিত এই বাড়িটি নিয়ে গৌরব করেন এলাকাবাসী ও তাঁর পরিবার। ‘ভাসানী নগর’ নামে পরিচিত এই বাড়িটি দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে অনেকেই ছুটে আসেন। তবে সময়ের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে কৃষক আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মাওলানা ভাসানীর অনেক স্মৃতি। অযত্নে আর অবহেলায় পড়ে আছে এই ভাসানীর এই বাড়িটি।
মাওলানা ভাসানীর নাতি মনিরুজ্জামান খান ভাসানী। ভাসানীর ছেলে আবু বকর খান ভাসানীর ছেলে। মনিরুজ্জামান জানান, ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় ভারতের আসাম সীমান্তবতীর্ এলাকা কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে এই বাড়ি নিমার্ণ করেন মাওলানা ভাসানী। দুই স্ত্রীর একজন হামিদা খানমকে এই বাড়িতে রেখে যান। হামিদা খানম ছিলেন তাঁর ছোট স্ত্রী। মাঝে মাঝে এই বাড়িতে আসতেন, যেতেন। তবে ১৯৬৫ সালের ভুরুঙ্গামারীতে কৃষক সন্মেলনকে কেন্দ্র করে তিন মাস এই বাড়িতে ছিলেন ভাসানী। এসময় তিনি দরবার হল, মুসাফির খানা, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল ও দিঘি গড়ে তোলেন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকার কারণে পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারেননি। তবে মাঝে খোঁজ নিতেন। স্ত্রী ও সন্তানদের টাঙ্গাইল নিয়ে যেতেন। হামিদা খাতুন মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এখানে বাস করতেন।
বাড়িটিতে অনেক সময় ভক্ত ও কমীর্রা আসতেন। রাত্রিযাপন করতেন। তাদের থাকার জন্য একটি দরবার হল নিমার্ণ করেন তিনি। রাজনৈতিক সভা ছাড়াও ভক্তদের দেখা সাক্ষাৎ করতে এই দরবার হলে। টিনের তৈরী বর্তমানে এই ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় বহন করছে স্মৃতি। পাশে একটি পুকুর তিনি নিজেই খুঁড়েছেন।
এই বাড়িতে এসেছেন হাজী দানেশ, মশিউর রহমান যাদু মিয়া, রাশেদ খান মেনন, শামসুল হক চৌধুরীসহ অনেক নেতা। এই বাড়িকে ঘিরেই ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭১এর মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে সর্বশেষ সীমান্ত সফরে এসে মাওলানা ভাসানী এই বাড়িতে এসেছিলেন।
মাওলানা ভাসানীর ছেলে আবু বকর খান ভাসানীর তিন ছেলে। এর মধ্যে স্ত্রী বিউটি বেগম ও ছেলে মেহেদী খান ভাসানীকে নিয়ে ভুরুঙ্গামারীর বাড়িতে বাস করেন তাঁর বড় ছেলে মনিরুজ্জামান খান ভাসানী। এছাড়া ন্যাপ ভাসানীর সভাপতি হাসরত খান ভাসানী, আর ছোট ছেলে ও আজাদ সোবহান খান ভাসানী টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তারা টাঙ্গাইলের বাড়িতে থাকেন।
ভুরুঙ্গামারীতে ভাসানী ৪২ বিঘা জমি রেখে যান। এরমধ্যে হামিদা খানমের নামে একটি স্কুলের নামে দান করেছেন বেশ কিছু জমি। ভাসানী স্মৃতিসংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে উইল করা আছে কিছু সম্পত্তি। বাড়ি ও পুকুরে আছে সোয়া ১২ বিঘা জমি। ফসলি জমি আছে ২০ বিঘা। বাড়িতে রয়েছে মাওলানা ভাসানীর ব্যবহৃত কিছু স্মৃতিচিহৃ। রয়েছে বসার চেয়ার, টুপিসহ কিছু দ্রব্য।
ভাসানীর স্মরণে স্মৃতি সংঘ থাকলেও কার্যক্রম সীমিত। বছরে একবার ওরস শরীফ হয়। ভাসানী পীর হিসেবেও সমধিক পরিচিত। অনেক ভক্ত রয়েছে তাঁর। তারা আসতেন, নানা বিষয়ে পরামর্শ নিতেন। ভক্ত ও সহচর মুছা ফকিরের কবরও রয়েছে এখানে। তার বাড়ি ছিল গাইবান্ধা। তিনি দীর্ঘদিন এই বাড়িতে বাস কেও ৮০ সালের দিকে মারা যান।
স্থানীয় গ্রামবাসী ভাসানীর স্মৃতি ধরে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ভাসানীর নাতি মনিরুজ্জামান জানান, ভাসানীর নামে জাদুঘর ও পাঠাগার নিমার্ণসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা তার আদর্শ ধরে রাখার চেষ্টা করলেও অর্থ ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ভাসানীর স্মৃতি ধরে রাখা যাচ্ছেনা।
স্মৃতি বিজরিত বাড়িটি রক্ষার দাবী জানিয়ে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভাসানীর বাড়িটির সংস্কার করলে এটি একটি পর্যটন স্পট হিসেবে চিহৃিত হবে এবং শিক্ষার্থী ও গবেষকদের প্রয়োজন মেটাবে।’

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!