উলিপুর ও রাজারহাটে সমানতালে লড়ছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহীরা

আব্দুল খালেক ফারুক:
আগামী ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ইউনিয়ন পরিষদ নিবার্চনে কুড়িগ্রামের দুটি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রায় প্রতিনিটি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় দলের কমীর্রা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। বাড়ছে সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা। অনেক ক্ষেত্রে বিদ্রোহী প্রার্থীর দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন দলের প্রার্থীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি সাংগঠনিক ব্যবস্থা। কারণ বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রকাশ্য গোপনে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামীলীগের এক শ্রেণির নেতা।
উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ১০ জন ও রাজারহাটের ৭টি ইউনিয়নে ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজারহাট সদরে দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক। তাঁর বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সমানতালে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ সভাপতি আজগার আলী, বনানী থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাজেদুর রহমান মন্ডল। ইতোমধ্যে এই ইউনিয়নে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুরের অভিযোগ মামলা হয়েছে। দলীয় প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক দাবী করেছেন, তিন বিদ্রোহী এক হয়ে তার বাড়িতে হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করায় মামলা করেছেন তিনি।
অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী রহিম বাদশা আওয়ামীলীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও প্রচারণায় বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনেছেন। প্রতিনিয়ত অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের কারণে নিবার্চনী মাঠে বাড়ছে উত্তেজনা।
চাকিরপশার ইউনিয়নে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুস ছালাম দলের প্রতীক নিয়ে লড়লেও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ সোহরাওয়াদীর্ বাপ্পির স্ত্রী রানু সোহরাওয়াদীর্ লড়ছেন। সোমবার রাতে এখানে নৌকা প্রতীক ভাংচুরের ঘটনার পর উত্তেজনা বিরাজ করছে। নাজিমখান ইউনিয়নে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান প্রার্থী হওয়ায় দলীয় প্রার্থী আব্দুল মালেক পাটোয়ারী বেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। ইতোমধ্যে আবিদুর রহমানকে যুবলীগ থেকে বহিস্কার করা হলেও নিবার্চনী মাঠে রয়েছেন দাপটের সঙ্গে।
ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ কর্মকারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল কুদ্দুছ। বিদ্যানন্দে বর্তমান চেয়ারম্যান ও দলীয় প্রার্থী তাইজুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন। উমর মজিদ ইউনিয়নে দলের প্রার্থী জহুরুল ইসলামকে চ্যালেঞ্জ করে প্রার্থী হয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন।
উলিপুরের ১৩টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী থাকলেও বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বেশীরভাগ ইউনিয়নে অস্বস্তিতে রয়েছেন দলীয় প্রার্থীরা। দলের একাধিক প্রার্থী থাকা ও প্রকাশ্যে একে অন্যেন বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছোড়ি করায় সুবিধা পাচ্ছে বিএনপি ও জাপার সমর্থিত প্রার্থীরা।
জানা গেছে, উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতে ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য লিয়াকত আলী সরকার। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে তার বিরুদ্ধে লড়ছেন ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি কামরুজ্জামান মুন্সী রানা। বুড়াবুড়ি ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান খন্দকার। ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান আবু তালেব সরকার তার বিরুদ্ধে ভোটে দাড়িয়েছেন। তবকপুর ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোখলেছুর রহমান। এখানে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ হোসেন মুকুল লড়ছেন তার বিরুদ্ধে। গুনাইগাছ ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রউফ রিজু। তবে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তার বিরুদ্ধে। থেতরাই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল জলিল সরকার। তবে তাকে চ্যালেঞ্জ করছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদিয়ুজ্জামান। ধামশ্রেণি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল হক সরদার। তবে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য কবীর উদ্দিন সরকার ও বর্তমান চেয়ারম্যান রাখিবুল সরদার। ধরনীবাড়ী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল গফফার সরকার, স্বতন্ত্র লড়ছেন উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য এরশাদুল হক, দুর্গাপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি খাইরুল ইসলাম বাবলু সরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন উপজেলা কৃষকলীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সাঈদ। এখানে সংঘর্ষ ও নৌকা প্রতীক ভাংচুরের ঘটনায় বিরাজ করছে উত্তেজনা। বজরা ইউনিয়ন পরিষদে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বজরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল কাইয়ুম সরদার।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!