আঠারো চুলার পিঠায় জমজমাট কারবার দুই ভাইয়ের

সাজেদুল করিম সুজন:
হাসিমুদ্দিন ও জাহাঙ্গীর দুই ভাই। বাড়ি তাদের চর কুড়িগ্রাম। নদীর ভাঙন আর বন্যায় তাদের কাহিল অবস্থা। জমিজমা সব নদীগর্ভে বিলীন। দিন মজুরী করে চলে জীবন। ব্যাটারী চালিত বাহন চালু হলে অটো চালনাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন হাসিমুদ্দি। তারপর একবেলা অটো চালানোর পাশাপাশি ভাপা পিঠার দোকান দেন কুড়িগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘোষপাড়াস্থ মুক্তিযোদ্ধা স্মতিফলকের সামনে একটা চুলো নিয়ে ভাপা ও চিতুই পিঠার ব্যবসা শুরু করেন। ঢাকা কুড়িগ্রামের ইকোনমিক ক্লাসের যাত্রীরাই তার খদ্দের ছিলো।
মান সম্মত পিঠার কারণে খদ্দের সংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে চুলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার সংখ্যা এখন দশটি। দশটি চুলা একসাথেই জ্বলে। অসম্ভব নৈপুন্যে দশটিতেই বিভিন্ন ধরণের পিঠা তৈরী হচ্ছে। একজন পিঠা বানাচ্ছেন আর একজন বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে প্রায় রাত সাড়ে ১২টা অবধি তাদের চুলা জ্বলে। প্রতিদিন প্রচুর বিক্রিবাট্টা করেন।
হাসিমুদ্দিনের পাশাপাশি একইভাবে তার ছোটভাই জাহাঙ্গীরও পিঠার ব্যবসা শুরু করেন রাস্তার ওপর পাশে। তার দোকানে আট চুলা। দুই ভাইয়ের প্রতিদিনের বিক্রি প্রায় বারো চৌদ্দ হাজার টাকা।
তাদের দুই ভাই সম্পর্কে উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন বলেন— দুই ভাইয়ের পিঠার ব্যবসা কুড়িগ্রাম শহরে মানুষজনের মধ্যে বেশ আলোচনার। মানুষজন লাইন দিয়ে অপেক্ষা করে পিঠার জন্য। ইদানিং তারা বাসা বাড়িতেও পিঠা সরবরাহ করেন।একসাথে আঠারো উনুনের আগুনে পিঠা বানানোর দৃশ্য যেমন শৈল্পিক তেমনি নজরকাড়া। ব্যবসায়িক সুনামের কারণে ফ্লোটিং যাত্রীর থেকে হাসিমুদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের পিঠা শহুরে পরিবারেও এখন জায়গা করে নিয়েছে।
যারা শীতকালে কুড়িগ্রামে বেড়াতে আসবেন, তাঁরা হাসিমুদ্দিন— জাহাঙ্গীরের দুই দোকানের পিঠা খেতে না চাইলেও একসাথে আঠারো চুলায় পিঠা ভাজার নৈপুন্য দেখতে ভুলবেন না।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!