কুড়িগ্রামের শেন ওয়ার্ন সিয়াম!

নাজমুল হোসেন:
অপরিপক্ক পিচে বলের টার্ন দেখলে চোখ ফেরানো মুশকিল। বল লেগের দিক থেকে অফের দিকে ঘুরে যায় অনায়াসে। বেশির ভাগ সময়েই বল পিচে পড়ার পর ঘুরে অফ সাইডে আবার স্টাম্পে উপড়ে ফেলে। এমন কৃতিত্ব উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তি ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ছেলে ৭ম শ্রেণি পড়–য়া সামিউল হক সিয়াম এর। ডানহাতি লেগ স্পিনার হিসেবে ইতোমধ্যে নিজ এলাকা এবং সামাজিক মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে সিয়ামের বোলিং এ্যাকশন। সে শেন ওয়ার্ন বা রশিদ খানের মত বিশ্বসেরা বোলার হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য নিজেকে নিয়োজিত করতে চায়।
এলাকাবাসী জানান, দরিদ্র পরিবারের সন্তান সিয়াম ৭বছর বয়স থেকেই ক্রিকেট খেলার প্রতি প্রবল আগ্রহ। সেই থেকে সিয়াম অস্ট্রেলিয়ার শেনওয়ার্নকে অনুসরণ করে স্বপ্ন দেখছে লেগস্পিনার হবার। জাতীয় দলে খেলার পাশাপাশি বিশ^কাপ জয়ের স্বপ্ন দেখে সিয়াম। পশ্চাৎপদ এলাকা আর দারিদ্রতার কারণে কতদূর যেতে পারবে সিয়াম সেটাই ভাবনার বিষয়।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন দুলু মাস্টার। জায়গা জমি তেমন না থাকায় বর্তমানে সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছেন স্ত্রী কল্পনা বেগম, ছেলে ওয়ায়েস কারুনী (১৬),সামিউল হক সিয়াম (১২),আয়াতুল্লা রুহানী শুবা (৭)। তার টিউশনির টাকা দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া,বাড়ি ভাড়া এবং সংসার চলে। আর পৈতৃক সম্পতিতে ভাই—বোনরাই থাকেন।
সিয়াম ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্র। লেগ স্পিনার হবার সুবাদে এলাকায় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে থাকে। সে জেলা বয়স ভিত্তিক অনুর্ধ্ব—১৪ এ সুযোগ পেলেও অর্থাভাবে কুড়িগ্রাম স্টেডিয়াম এসে খেলা হয় না। তাই ভূরুঙ্গামারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় এবং ভূরুঙ্গামারী সরকারি কলেজ মাঠেই অনুশীলন করে। এভাবে শত বাধা বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সিয়াম। সঠিক প্রশিক্ষণ আর ভালো কোচের অধিনে প্রশিক্ষণ নিতে পারলে বাংলাদেশের একজন লেগ স্পিনারই অভাব পূরণে ভূমিকা রাখতে পারার সম্ভাবনা রয়েছে।
সিয়াম বলেন, ‘আমি ৭বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলি। শেনওয়ার্ন,রাশিদ খানের বোলিং দেখে লেগ স্পিনার হবার ইচ্ছে জাগে আমার। আমি স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে জাতীয় দলে খেলব এবং বিশ^কাপ জেতাবো।’
দেলোয়ার হোসেন দুলু বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে সিয়াম ক্রিকেট খেলার প্রতি আগ্রহ। আমিও সেই থেকে তাকে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ছেলেকে ভালো প্রশিক্ষণের জন্য কোথাও পাঠাতে পারি না। এমনকি কুড়িগ্রামে অনুর্ধ্ব—১৪ এ সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে সেখানেও পাঠাতে পারি না।’
খেলার সহকমীর্ রাফিক বলেন, ‘সিয়াম লেগ স্পিনার হিসেবে খুব ভালো বোলিং করে। ওর বল খেলতে বেশ বেগ পেতে হয়। স্বাভাবিকভাবে খেলতে ব্যাটারদের সমস্যায় পড়তে হয়। সিয়াম একজন ভালো কোচের অধিনে প্রশিক্ষণ নিলে অনেক বড় একজন লেগ স্পিনার হতে পারবে।’
কুড়িগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার কোচ বিজন কুমার দাস বলেন,সিয়ামকে আমি ওর বোলিং এ্যাকশন দেখে বয়স ভিত্তিক অনুর্ধ্ব—১৪ এ অন্তভুর্ক্ত করি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে স্মার্টনেস, বোলিং কৌশলে গ্রামের ছেলে হিসেবে কিছুটা দুর্বলতা আছে। এটা থাকা স্বাভাবিক। তবে সিয়ামকে ভালো প্রশিক্ষণ দেয়া গেলে দেশের লেগ সিম্পনারের ঘাটতে পূরণে ভূমিকা রাখতে পারবে।
কুড়িগ্রাম ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইদ হাসান লোবান বলেন,সিয়ামের বিষয়টি আমি সামাজিক মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তার পারিবারিক অস্বচ্ছলাতার কারণে এখানে নিয়মিত আসতে পারেনি। তবে আমার পক্ষ থেকে তার থাকার ব্যবস্থা,খেলার সরঞ্জামাদি দিয়ে সহযোগিতা করতে পারবো। কিন্তু সিয়ামের যাতায়াত,খাওয়া ইত্যাদি কিছু বিষয়ে সহযোগিতা প্রয়োজন।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!