কুড়িগ্রামে জোড়া শিশু নুহা—নাবার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

আব্দুল খালেক ফারুক:
নুহা—নাবা। দুই জমজ বোন। শুধু জমজ হলে কথাই ছিল না, নিয়তি ওদের বেঁধে রেখেছে এক সঙ্গে। কোমরের কাছে যুক্ত হয়ে আছে দুই শিশু। খাবারসহ অন্য সব কিছু স্বাভাবিক থাকলেও বাড়তে থাকা শিশু দুটির ভবিষ্যত নিয়ে দারুণ চিন্তিত রানা—নাসরিন দম্পতি। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু দুটিকে পৃথক করা প্রয়োজন হলেও অর্থাভাবে চিকিৎসকদের স্মরণাপন্ন হতে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা চেয়েছে অসহায় এই দম্পতি।


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে বাড়ি রানা—নাসরিন দম্পতির। আলমগীর হোসেন রানা একজন পরিবহন শ্রমিক। নাসরিন বেগম গত ২২ মার্চ কুড়িগ্রামের একটি বেসকারি ক্লিনিকে জোড়া লাগানো দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। জোড়া লাগানো জমজ দুই কন্যাকে পেয়ে আনন্দের বদলে বিষাদ ভর করেছে এই দম্পতির মনে। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করার জন্য যেতে পারছেন না কোন হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে। এ অবস্থায় অসহায় এই দম্পতি তাকিয়ে আছেন সরকারের দিকে।
বুধবার সরেজমিন শিবরাম শিশুদের বাড়িতে গেলে দেখা যায় ভাঙা তিনটি ঘর নিয়ে রানার সংসারে দৈন্যতার ছাপ স্পষ্ট। বিরল এই জোড়া শিশুকে দেখতে ভিড় করছেন অনেকেই। বাড়িতে আসার পর থেকে মা নাসরিন দুশ্চিন্তায় খাওয়া দাওয়া প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। ফুফু হাছিনা বেগম ও দাদী আলেয়া বেগম শিশুদের ফিডারে দুধ খাওয়ানোসহ যাবতীয় পরিচযার্ করছেন।
নাসরিন বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাচ্চা দুটোর কষ্ট সহ্য করতে পারছিনা। সরকার যেন সাহায্য করে, আমাদের চিকিৎসা করার সামর্থ্য নাই।’ বাবা আলমগীর হোসেন রানা বলেন, ‘দিনে যা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না। বাচ্চা দুটার চিকিৎসায় অনেক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই টাকা জোগার করার উপায় নাই।’
রানা জানান, বাড়িভিটার ১০ শতক জমি ছাড়া কোন সহায় সম্বল নেই। এ অবস্থায় শিশু দুটিকে নিয়ে অকূল পাথারে পড়ে গেছেন। কোন সুপরামর্শ বা সহযোগিতার আশ্বাস মিলছেনা। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া তাদের কোন উপায় নেই বলে জানান।
তিনি আরো জানান, কুড়িগ্রাম ও রংপুরে তিন দফা আলট্রাসোনোগ্রাম করা হলেও জোড়া বাচ্চার বিষয়টি জানা যায়নি। কুড়িগ্রামের খান ক্লিনিকে ডা. তৌফিকুল ইসলাম সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশু দুটিকে ভুমিষ্ট করান।
এদিকে সরকারি—বেসরকারি সহায়তা না পেলে শিশু দুটির পরিণতি কী হবে এ নিয়ে শঙ্কিত এলাকাবাসী। শিবরাম খামার গ্রামের বাসিন্দা জানান, আব্দুল জলিল জানান, পরিবারটি এতো গরীব যে চিকিৎসার ব্যয় বহন করার তাদের জন্য অসম্ভব। প্রতিবেশি জরিনা বেগম বলেন, ‘কোনদিন দেখিনাই এমন ঘটনা। চাপা না বাচ্চা দুইটা তাড়াতাড়ি চিসিা না পাইলে বাঁচপার নয়।’
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মনজুর মোর্শেদ জানান, কুড়িগ্রামের জোড়া লাগানো শিশু দুটির উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!