‘একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই হবে লক্ষ্য’

আব্দুল খালেক ফারুক:
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিধার্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম জাকির হোসেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি আরো জানান, আগামী সেশন থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আপাতত কার্যক্রম পরিচালিত হবে ভাড়া নেয়া ভবনে। এছাড়া তিনি জানিয়েছেন, বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে বিশ্বমানের, এখানে শিক্ষা ও গবেষণাকে সমান গুরুত্ব দেয়া হবে।
বিভাস: কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কুড়িগ্রাম তথা দেশবাসীর ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কুড়িগ্রামের কোথায় স্থাপিত হবে?বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক প্রস্তুতি কেমন?


ভিসি: এখন মূলত অফিশিয়াল কাজগুলি দ্রুত সম্পাদন করার দিকে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহন সংক্রান্ত চিঠিপত্র, মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কাজ ইত্যাদী চলছে। আমরা জমি অধিগ্রহনের কাজটিকে সবার্ধিক গুরুত্ব দিয়ে করছি। এই জমিটি কোথায় নিধার্রণ করা হবে—এ ব্যাপারে সকল স্টেক হোল্ডার, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ সকলের সঙ্গে মতবিনিময় করবো। এই মতবিনিমিয়ের মাধ্যমে স্থান নিধার্রণের বিষয়টি আশা করি নিম্পত্তি হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কুড়িগ্রামের মানুষের যে উচ্ছ্বাস দেখেছি, একটি বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হোক এটা তারা চায়। কাজেই আশা করি সকলেই একমত হয়ে একটি জায়গা নিধার্রণের ব্যাপারে আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। স্থান নিধার্রণ হলেই জমি অধিগ্রহনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবার পাশাপাশি একটি ভালো বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করবো। আগামী বছর আমরা সেশন শুরু করবো। তবে আমরা চাই সেশন যেখানেই শুরু করিনা কেন—আমাদের এই ছাত্ররা যাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে তাদের ডিগ্রিটা শেষ করতে পারে। এ কারণে বাকী কাজগুলো দ্রুত এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আমি আশা করবো কুড়িগ্রামের প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, সাংবাদিক সুশীল সমাজ সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা যদি সহযোগিতা করেন, আমরা মনে করি আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়কে দ্রুতই একটি পরিপূর্ণ রুপে নিয়ে যেতে পারবো বলে আশা করি।

বিভাস: আগামী সেশন থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছেন। শুরুতে কতটা ডিপার্টমেন্ট নিয়ে এর যাত্রা শুরু হবে?
ভিসি: আপনারা জানেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাক্ট অনুযায়ী গ্রোসলি চারটি ডিসিপ্লিনকে এড্রেস করা হবে। এখানে থাকবে কৃষি, লাইভ স্টোক ও ভেটেনারি সায়েন্স, ফিসারিজ ও সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি। সেগুলির সঙ্গে অনেক ফ্যাকাল্টি হবে। প্রথমেই এগ্রিকালচার, ফিসারিজ ও লাইভস্টোক এই তিনটি সেক্টরকে এড্রেস করে প্রথমে শুরু করবো। খুব অল্প পরিমাণ ছাত্র ভর্তি করা হবে। কারণে অবকাঠামো সংকট আছে। এগুলি কিন্তু জেনারেল ইউনিভার্সিটির মতো না, এটা বিশেষায়িত ইউনিভার্সিটি। প্রতিটি বর্ষে ১৭—১৮টি সাবেজেক্ট পড়াতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষক—কর্মচারি নিয়োগ করতে হবে। যেমন ধরেন, বাংলা পড়াতে গেলে শুধু বাংলা পড়ালেই চলবে। কিন্তু এখানে এগ্রিকালচার পড়াতে গেলে এগ্রিকালচার রিলেটেড যত সাবজেক্ট আছে—সব পড়াতে হবে ইন্ট্রিগ্রেটেড এ্যাপ্রোচে। কাজেই পরিধি যেহেতু বড়, একটু সময় নিয়ে করতে হবে।

বিভাস: কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয় কী ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
ভিসি: আমি প্রথমেই বলেছি, যেহেতু বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই চিন্তা করেই এই বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিয়েছেন। উনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু লেখাপড়া করলে হবেনা—গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। কারণ কৃষককে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছু পেতে হবে। শুধু সার্টিফিকেট সবর্শ্ব গ্রাজুয়েট তৈরী করলাম, এই সোসাইটিতে কৃষির উন্নয়নে তাঁর কোন অবদান থাকলোনা, এখনকার যুগে সেটি চিন্তা করলে হবেনা। সুতারাং আমরা মনে করি এখানকা গ্রাজুয়েটরা শিক্ষার সঙ্গে সমহারে গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত াকবে। তাদের গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি আমরা কৃষকদের কাছে নিয়ে যাবো। সেটা অবশ্যই সাসটেনেবল ওয়েতে নিয়ে যাবো—যাতে কৃষক উপকৃত হয়। প্রথম থেকে ছাত্ররা কৃষকের সঙ্গে ও গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে। কাজেই শিক্ষার গুরুত্বের সঙ্গে গবষেণার গুরুত্ব কম হবেনা।

বিভাস: আপনার হাত ধরেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অনেক কাজ, অনেক স্বপ্ন। আপনি এই কাজ করতে গিয়ে কী ধরণের চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
ভিসি: আমার হাত ধরে না ঠিক। এটি সকলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়। একজন লোককে দায়িত্ব দিতে হয়, সবকিছু সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য; সবার সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য। এই সমন্বয়ের দায়িত্ব ও কিছু পলিসি মেকিংয়ে অবদান রাখার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অবশ্যই একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টার জন্য বহু চ্যালেঞ্জ আছে। চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে মেইনটেন করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে যেমানে উন্নিত করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আপনাদেরকে উপহার দিয়েছেন;কোনভাবেই আমরা যেন ওনাকে ছোট না করি। জানি বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই মাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ অনেক আছে। আশা করি আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, আমরা যদি চাইযে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বমানের হোক—তাহলে সেটা সম্ভব। এখানে যে শিক্ষার্থী পড়বে, সে যাতে গর্ব করে বলতে পারে আমি বিশ্বমানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। কাঙ্খিত সেই মানে পেঁৗছতে গেলে সবার সহযোগিতা লাগবে। চ্যালেঞ্জ থাকবে, সব জায়গায় থাকে। আশা করি সবাই সহযোগিতা করলে সেই চ্যালেঞ্জগুলো আমরা মোকাবেলা করতে পারবো।

বিভাস: কুড়িগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস কবে চালু হবে?
ভিসি: কুড়িগ্রামে আমরা আপাতত একটি অফিস ভাড়া নিচ্ছি। সেখানে বসে জমির বিষয় ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা, কৃষকদের সঙ্গে বসা—এই এলাকার কৃষির সমস্যা নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। সেই সঙ্গে আমাদের অগার্নোগ্রাম ও সাবজেক্টগুলো যাতে এই এলাকার কৃষির উন্নয়ন ওরিয়েন্টেড হয় সেটি ঠিক করা হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে সম্পৃক্ত যে বিষয়গুলো; সেগুলো কৃষির সঙ্গে ইন্ট্রিগেটেড করার জন্য আমরা নতুন কিছু সাবজেক্ট নিধার্রণ করবো। সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে। দেশে—বিদেশে যারা এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। অবকাঠামো তৈরীর সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়গুলো আমরা এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্য নিধার্রণ করেছি। যেহেতু নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয় যেসব জায়গায় এগিয়ে গেছে তার সঙ্গে আগামীতে আরো ২৫ বছরে কী কী বিষয় কৃষিতে সম্পৃক্ত হতে পারে—সেই চিন্তা করেই সাবেজেক্টগুলো নিধার্রণ করা হবে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!