ইউরিয়া সারের মুল্যবৃদ্ধিতে আমন আবাদে লোকসানের শঙ্কা কুড়িগ্রামের কৃষকদের

বোরো আবাদে তেমন লাভ হয়না কৃষকদের। ঝড়—বৃষ্টির কবলে পড়ে পুরো ফসল নষ্ট হয় অনেক সময়। তাই আমন চাষ করে কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে কিছুটা লাভের আশা করেন। কিন্তু এবার আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কুড়িগ্রামের কৃষকরা। জমি চাষ, মজুর, কীটনাশক, নন ইউরিয়া সারের চড়া দামের পাশাপাশি ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ছয় টাকা বাড়ায় আমন চাষীরা পড়েছেন লোকসানের শঙ্কায়।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের মীরেরবাড়ি গ্রামের কৃষক সাহেব আলী খরচের হিসেব দেখিয়ে জানান, এবার নিজের জমিতে আমন চাষ করলে সামান্য লাভ থাকতে পারে। কিন্তু বগার্চাষীদের খরচের ৪০ ভাগ লোকসান গুণতে হবে।
সাহেব আলী এবার এক একর জমিতে স্বর্ণ জাতীয় আমন ধান রোপন করেছেন। আরো এক একর জমিতে রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি জানান, এবার এক একর জমিতে বীজতলা তৈরীতে ১ হাজার ৮০০, জমি তৈরীতে ৪ হাজার ২০০, চারা লাগানোতে ৫ হাজার, নিড়ানিতে ৩ হাজার, কীটনাশক স্প্রেতে ৩ হাজার, নন ইউরিয়া সারে ২ হাজার ৮০০, ধান কাটায় ১০ হাজার, মাড়াইয়ে ১ হাজার, খরার কারণে সেচের সাহায্যে চারা রোপন ও পরবর্তিতে সেচ দিতে ১ হাজার ২০০, ইউরিয়া সারে ১ হাজার ৯০০ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ১ হাজার ৩০০ টাকাসহ সব মিলে খরচ পড়বে ৩৫ হাজার ২৮০ টাকা খরচ পড়বে। ধান উৎপাদন হবে সব্বোর্চ ৪৫ মণ। প্রতিমণ ধান ৯০০ টাকা হলে ধান বিক্রি হবে ৪০ হাজার ৫০০ টাকা। এতে প্রায় ৪ হাজার টাকা লাভ থাকবে। আর ধানের দাম কম হলে লোকসান হবে।
তিনি আরো জানান, গত বছরের চেয়ে প্রতি একরে ৪ হাজার টাকা খরচ বেড়েছে। শুধু ইফরিয়া সারে খরচ বেড়েছে ৫৪০ টাকা। দৈনিক হাজিরার মজুরের মজুরি গত বছর ছিল ২৫০ টাকা, এবছর ৪৫০ টাকার কম মজুর মিলছেনা। একইভাবে ট্রাক্টর ভাড়া, কীটনাশকসহ সব উপকণের মুল্য বেড়েছে।
তবে জমি না থাকায় প্রতি একর জমি আবাদ করার ভাড়া হিসেবে মালিককে ২০ মণ ধান দেয়ার চুক্তিতে যারা আবাদ করছেন, সেই সব বগার্চাষীদের লোকসান অবধারিত। মীরের বাড়ি গ্রামের বগার্চাষী জুয়েল ইসলাম জানান, সরকার নিধার্রিত বর্ধিত দামের চেয়ে বেশি দামে ইউরিয়া সার বিক্রি করছেন স্থানীয় দোকানদাররা। সকালে সেলিমনগর বাজারে প্রতি কেজি ২৪ টাকা দাম হাকানোর কারণে অবশেষে চওড়া বাজার থেকে ২১ টাকা কেজি দরে ইউরিয়া কিনে জমিতে প্রয়োগ করছেন। তিনি জানান, আবাদ যেমনই হোক মালিককে প্রতি একরে ২০ মণ ধান দিতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে শ্রম দিতে না পারলে লোকসানের বোঝা টানতে হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: শামসুদ্দিন মিয়া জানান, পুরাতন মূল্যের সারের মজুদ শেষ হবার পরেই নতুন মূল্যে সার বিক্রি করতে পারবে বিক্রেতারা। বেশি মূল্য নেয়া বা কৃত্রিম সংকট তৈরী করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঠ পযার্য়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!