উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখছে চরের শিশুরা

আব্দুল খালেক ফারুক:
চরাঞ্চলের শিশুদের ঝরেপড়া রোধ ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মপুত্রের চর ভগবতিপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। বিদ্যালয়ের নাম ‘চর ভগবতিপুর উচ্চ বিদ্যালয়’। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক ও সদর উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্র সার্বিক তত্বাবধানে ইতোমধ্যে বিদ্যালয়টির টিনশেড ঘর নিমার্ণ করা হয়েছে। বসানো হয়েছে প্রয়োজনীয় ফার্ণিচার। উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্কে সভাপতি করে গঠন করা হয়েছে একটি নিবার্হী কমিটি। সেই কমিটির উদ্যোগে শিক্ষক নিয়োগ, পাঠদান অনুমতির জন্য আবেদনসহ আনুসঙ্গিক কাজ চলমান রয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, নদ—নদী বহুল জেলা কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে মাধ্যমিক পযার্য়ের স্কুল মাদ্রাসা নেই বললেই চলে। জেলার চরাঞ্চলে বসবাসরত অন্তত ৫ লাখ মানুষের জন্য এমপিওভুক্ত মাত্র ৫টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা রয়েছে। মাধ্যমিক পযার্য়ের স্কুল না থাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করার পর ঝরে পড়ছে বেশিরভাগ শিশু। ছেলেরা নিয়োজিত হচ্ছে কৃষি কাজে। আর মেয়েরা শিকার হচ্ছে বাল্য বিয়ের। তাই চরে মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানের অনেক চাহিদা রয়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের চর পোড়ারচরের বাসিন্দা বানিজ উদ্দিন স্নাতক শ্রেণিতে পড়েন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে। তিনি জানান, এক সঙ্গে ৩৫ জন শিক্ষার্থী বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করলেও হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে মাত্র ৪জন। চর এলাকায় হাইস্কুল না থাকাই ঝরে পড়ার মুল কারণ।
ভগবতিপুরের ঝুনকার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিকুল হাসান জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয় পাশ করার পর এই চরে হাইস্কুল না থাকায় লেখাপড়ার সুযোগ ছিলনা। ছেলেদের কাজে পাঠানো হতো। আর মেয়েদের বিয়ে দিতো অভিভাবকরা। এখন হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা হওয়ায় সবাই উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন দেখছে। এই স্কুলের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন ও মাসুদ রানা জানান, এখন আর লেখাপড়া নিয়ে কোন চিন্তা নেই।
চর ভগবতিপুরের বাসিন্দা হজরত আলী বলেন, ‘ভগবতির চরে হাইস্কুল হওয়ায় মেয়েদের বাল্য বিয়ে কমে যাবে। ছেলেদের আর দূরবতীর্ স্কুলে ভর্তি হয়ে লজিং থাকার চিন্তা করতে হবেনা।’ যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ৭টি ওয়ার্ডই নদীর চরে। প্রাথমিক পাশের পর চরে লেখাপড়ার আর কোন সুযোগ ছিলনা। তাই সরকারি উদ্যোগে এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর এলাকাবাসী সবাই আনিন্দত।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় সাক্ষরতার হার ৬৫ ভাগ। চরাঞ্চলের শিক্ষার নিম্নহারের কারণে বাড়ছে দারিদ্র্য ও বেকারত্ব। চরাঞ্চলের শিশুদের ঝরেপড়া রোধ ও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মপুত্রের চর ভগবতিপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় প্রশাসন আশা করছে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি চরবাসীর শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে সমাজের বিত্তশালী ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা এগিয়ে আসবেন। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার রাসেদুল হাসান বলেন, ‘দুর্গম চরে যাতায়াত সমস্যা প্রকট। মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ নেই। তাই জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় চরে শিক্ষার হার কাঙ্খিত পযার্য়ে নিয়ে যেতে ‘চর ভগবতিপুরে উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ক্লাশ শুরু হবে।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, সবার সহযোগিতায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর এর স্থায়িত্ব নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষকদের বেতন ও আনুসঙ্গিক খরচ জোগানো এবং প্রতিষ্ঠানটি একটি মানসম্মত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাতে স্বীকৃতি পায় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!