সুজন মোহন্ত:
কুড়িগ্রামের ভোজনবিলাসি মানুষদের কাছে অত্যন্ত এক প্রিয় নাম ‘ঝন্টুর দোকান’। ধারনা করা হয়, এটি কুড়িগ্রাম জেলার আদি মিষ্টির দোকান । ১৯৫২ সালে ঝন্টু লাল বণিকের হাতে তৈরী এই দোকানটি । শুরুতেই দোকানটি চা-বিস্কুট দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে মিষ্টির বাজারে ঐতিহ্য বহন করছে এই প্রতিষ্ঠানটি । তাদের ষ্পেশাল আইটেম পুরির সাথে আলুর ডাল। যা স্থানীয় ও বহিরাগত ভোজনবিলাসীদের কাছে অতিপ্রিয়।
কুড়িগ্রাম জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র কালীবাড়ি এলাকায় ঐতিহ্যের সুনাম অক্ষুন্ন রেখে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহি এই প্রতিষ্ঠানটি। পিতা সুরেন্দ্রলাল বণিক ও মাতা মালতি বণিক এর বড় পুত্র ঝন্টু লাল বনিক । পরিবারে সাত ভাইদের মধ্যে তিনি বড় । ১৯৫২ সালে চারদিকে মাতৃ ভাষা রক্ষার আন্দোলন চলছে, এমতাবস্থায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তিনি হাল ধরেন। শুরু করেন চা-বিস্কুট দিয়ে রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা। পরবর্তীতে ছোট্ট টিন শেড এর এই চায়ের দোকানটি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন ঝন্টুদার চায়ের দোকান নামে । মাঝপথে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় ঝন্টুদার চায়ের দোকান । এরপর দেশ স্বাধীন হবার পর পুণরায় চালু হয় ঝন্টুর চায়ের দোকান । পরবর্তীতে যার হাল ধরেন ঝন্টু লাল বণিকের ছোট ভাই স্বপন লাল বণিক । তিনি চা-বিস্কুটের পাশাপাশি বিক্রি শুরু করলেন পুরির সাথে আলুর ডাল । সেই মুখরোচক সাধারণ আলুর ডাল ও পুরি ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠলো অসাধারণ রসনা। সুস্বাদু এই খাবারের জন্য ক্রমেই ঝন্টুর চায়ের দোকান থেকে ‘ঝন্টুর দোকান’ নামে পরিচিত হয়ে উঠল। পরবর্তীতে বিভিন্ন মজাদার মিষ্টি বানিয়ে বিক্রি হতে থাকে দোকানটি।
১৯৮৬ সালে দোকানটি বিভক্ত হয়ে যায় দু’টি নামে। একটি দীপা মিষ্টান্ন ভান্ডার অন্যটি ঝন্টু মিষ্টান্ন ভান্ডার। বর্তমানে দু’টি দোকানেই প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি চায়ের পাশাপাশি বিভিন্ন মুখরোচক তেলে ভাজা ও দুধের তৈরী নানা ধরনের খাবার পাওয়া যায় । আর পুরনো আলুর ডাল ও পুরি পাওয়া যায় দুপুরের পরে। কালিবাড়ী রোডের বাসিন্দা সাংবাদিক শফি খান জানান, ঝন্টুর দোকানের পুরি আর আলুর ডালের খ্যাতি এলাকা ছাড়িয়ে বিদেশেও চলে গেছে। অনেক কিছু খেলেও এই খাবার না খেলে তৃপ্তি মেটেনা। প্রাচীন এই প্রাতিষ্ঠানটি কুড়িগ্রাম জেলায় আজও ঐতিহ্যের ধারক বহন করে চলছে।
জেলার খাবার-১ ঝন্টু মিষ্টান্ন ভান্ডারের পুরি-আলুর ডাল
Facebook Comments
Share