সদ্যজাত শিশুকে দত্তক দিলেন ভিক্ষুক দম্পতি

অনিল চন্দ্র রায়,ফুলবাড়ী
ভরণপোষণের ক্ষমতা না থাকায় সদ্যজাত কন্যা শিশুকে দত্তক দিলেন ভিক্ষুক দম্পতি। এ হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার বিকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বালাতাড়ী গ্রামে। যে দম্পতি সদ্যজাত কন্যা শিশুটিকে দত্তক নিলেন তাদের সন্তান না থাকার অভাব পূরণ করবে এই শিশুটি।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের মৃত ইদ্রিস আলীর ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হোসেন আলী সদ্যজাত শিশুটির বাবা। মা মর্জিনাও অনেকটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর মত। এই ভিক্ষুক দম্পতির ঘরে শনিবার (১৬ মে) সকাল ৭ টায় নিজ বাড়িতে ভূমিষ্ট হয়। স্বামী-স্ত্রী, বৃদ্ধ মা, তিন বছরের ছেলেসহ পরিবারের চার সদস্যকে কোন রকমেই ভিক্ষাবৃত্তি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। ভিক্ষাবৃত্তি তাদের একমাত্র পেশা। এভাবেই খেয়ে না খেয়ে ভিক্ষুক দম্পতির সংসার চলে। আজ সেই অভাবের সংসারে নতুন অতিথি আসলেও ভরণপোষণের ক্ষমতা না থাকায় অন্য এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে দত্তক হিসাবে নিজের কন্যা সন্তানকে তুলে দিলেন ভিক্ষুক দম্পতি হোসেন আলী ও মর্জিনা বেগম।
শিশুটির বাবা হোসেন আলী স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে না পারলেও তিনি জানালেন, আমরা খুবই গরীব। সব সময় আমাদের অভাব লেগেই থাকে। বৃদ্ধ মা ও তিন বছরের একটি শিশু সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমেই বেঁচে আছি। আর শিশুটির ভরণপোষণ করতে পারবো না। তাই নিজ ইচ্ছায় আমাদের পাশের গ্রামের এক আত্মীয় নিঃসন্তান হওয়ায় তাদেরকে দত্তক হিসাবে আমার কন্যা সন্তানকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। তারা আমাদের আগেই থেকেই সহায়তা করেন। আজও আর্থিক সহায়তা করেছেন এবং ভবিষ্যতেও আমাদের পাশে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
শিশুটির মা মর্জিনা বেগম জানান, অভাবের সংসারে ভরণপোষণের ক্ষমতা নেই। আমরা ভিক্ষা করি সংসার চালাই। আরও সন্তানসহ ঘরে শাশুড়ি রয়েছে। তাদেরকে নিয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। তাছাড়া যাকে সন্তান দত্তক দিয়েছি তারার আমাদের আত্মীয়। এই অভাবের সংসারে তাড়াই মাঝে মধ্যে আমাদের সহায়তাসহ খোঁজ খবর রাখেন। তারাও নিঃসন্তান এবং আমার সন্তনটি সেখানে ভাল থাকবে। তাই নিজে থেকেই তাদের হাতে সন্তানটি তুলে দেই।

অন্যদিকে উপজেলা একই কাশিপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আবু তাহের মিঠুর সঙ্গে খোঁচাবাড়ী গ্রামের মাছর উদ্দিনের মেয়ে শাহিদা বেগমের সাথে ৯ বছর পূর্বে বিয়ে হলেও আজও এই দম্পতি সন্তানেই মূখ দেখেনি। অন্যের সন্তানকে দত্তক নিয়ে অন্ধকার ঘওে আলোর মূখ দেখতে শুরু করলেন এই দম্পতি। তবে ভিক্ষুক দম্পতি সন্তানের সব সময় খোঁজ খবর রাখতে পারবেন।

দত্তক নেওয়া দম্পতি শাহিদা বেগম ও বাবু তাহের মিঠু জানান, তাদের পরিবারের সম্মতিক্রমেই শিশু মেয়েটিকে দত্তক হিসাবে আমাদের কাছে তুলে দেয় । আমরা মেয়েটির নাম রাখলাম মোনালিশা। তাকে আমরা হাফেজা তৈরি করবো। আমার সন্তানের জন্য আপনারা দোয়া করবেন যেন মানুষের মত মানুষ করতে পারি। সেই সাথে সন্তানের অভাব পুরণ করা দম্পতিদের যতদিন বেঁচে থাকবো তাদের খোঁজ খবর রাখরো। তারা তাদের সন্তানকে না দিয়ে দিলে আমরা কখনো সন্তানের অভাব বুঝতাম না। তার জন্য আমরা বাবা-মা ডাক শুনতে পারবো।

এ ব্যাপারে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মন্ডল জানান, ভিক্ষুক দম্পতি আমাকে জানিয়েছেন । তারা সন্তানের ভরণপোষণের ক্ষমতা না থাকায় তাদের এক আত্মীয় নিঃসন্তান হওয়ায় দত্তক হিসাবে তুলে দিয়েছেন। আসলে তারা খুবেই গরীব। ভিক্ষাবৃত্তি করেই সংসার চালান। শোনার পরে ওই ভিক্ষুক দম্পতির বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে আসা হয়েছে। সামনে তাদেরকে আরও সহায়তা করা হবে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!