নাগেশ্বরীতে ইটভাটার ধোঁয়ায় ফসল ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি

সাজেদুল করিম:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভাঙামোড় গ্রামে ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে ধান, ফলমুলের গাছ, বাঁশঝাড় ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন প্রায় একশ কৃষক ও দিনমজুর পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা ভাটা মালিকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবী করলেও তারা কালক্ষেপণ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সরেজমিন জানা গেছে, কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী সড়কের কুমরপুর বাজারের কাছে এআইবি ও কেজিবি নামে দু’টি ইটভাটা থেকে নির্গত গ্যাসের ধোঁয়ায় অন্তত ৩০ বিঘা জমির ধান ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জাতের গাছের পাতা বাদামী রঙ ধারণ করে ঝরে পড়ছে। বাঁশঝাড় আর কলাবাগানের কলাগাছের পাতা আর কান্ড ঝলসে গেছে। পরিপক্ক হবার আগেই আম, নারিকেল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলের গাছ থেকে ঝরে পড়ছে ফল।
ভাঙামোড় গ্রামের আবেদ আলীর ধানক্ষেতের পাশাপাশি বাঁশঝাড় ও গাছের ক্ষতি হয়েছে। একই অবস্থা তমেজ আলী, শুকুর আলী ও ঈসমাইল হোসেন, রসুল মিয়া, রফিকুল ইসলাম, মর্জিনা বেগমসহ অনেকের।
এলাকায় নি:সহায় বিধবা জোবেদা বেওয়ার দুটি ঘরের টিন নির্গত ধোঁয়ার কারণে নষ্ট হয়ে খুলে পড়েছে। এরপর কয়েকদিন আগে ঝড়ে বিধবস্ত হয়ে পড়ে আছে ঘর দু’টি। জোবেদা জানান, তার ঘরের বেড়া ও চাল নষ্ট হয়ে ধবসে পড়ছে। এখন এই ঘরে বাস করা যাচ্ছেনা। এছাড়া আমজাদ হোসেন, শান্তিয়া মিয়াসহ আরো অনেকের ঘর-বাড়ির টিন ও বেড়া নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গত বছরেও ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হলেও মাত্র কয়েকজনকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। অনেকেই কোন ক্ষতিপূরণ পাননি বলে জানিয়েছেন।
ভিতরবন্ধ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলী জানান, ভাটার ধোঁয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার নামে টালবাহানা করছে ভাটার মালিকরা। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া ক্ষতিপূরণ পাবার সম্ভাবনা কম।
বুধবার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ তৈরী ও ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি সরেজমিন তদন্ত করে উপজেলা কৃষি অফিসে রিপোর্ট দিয়েছেন। এতে প্রায় ৩০ বিঘা ধান ক্ষেত ও ৮৭টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে জানান তিনি।
এআইবি ভাটার ম্যানেজার পূর্ণচন্দ্র ভাটার কারণে ক্ষতির কথা স্বীকার করে জানান, কিছুলোককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর আহমেদ মাসুম বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। তবে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।’

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!