এস আলম, থেতরাই, উলিপুর
দেশের অনেক জেলায় নদী ভাঙন আছে, তারমধ্যে কুড়িগ্রাম অন্যতম। যেখানে ৭২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪০টি ইউনিয়ন নদী ভাঙন আর বন্যার কবলে।
আর কুড়িগ্রামের মধ্যে অন্যতম উলিপুর উপজেলা। যেখানে ১৪টি ইউনিয়নের ৮টি ইউনিয়ন নদী ভাঙন কবলিত, বন্যা কবলিত অঞ্চল।
এখানে প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার সবল পরিবার বাস্তুহারা হয়ে গরীবের তালিকায় চলে যায়। যার অনেক কিছুই ছিল, অনেক মানুষের যারা অর্থের যোগান বা কর্মের যোগানদাতা ছিল নদী ভাঙার পর তারা কি আর সে পর্যায় থাকবে?
কিছু বাস্তব উদাহরন দিয়ে শুরু করি,
আমার দাদা মরহুম একাব্বর দেওয়ানী তখন ৭একর জমির মালিক, বিশাল বাড়ি, বাগান, পুকুর, ফসলি জমি। আমি অল্প কিছু সময় দেখেছি তাতে মনে হয়েছে প্রতিদিন অন্তত প্রায় ২/৪ জন কৃষক কাজ করাই লাগছে। কৃষক গুলা কিন্তু গ্রামের আশে পাশের মানুষ। তাহলে মাসে প্রায় কত মানুষ এই পরিবার থেকে আয় রোজগার করত?
যখন তিস্তার গর্ভে সব বিলীন হয়ে গেল তখন আমাদের পরিবারেরই মাথা গোজার ঠাই পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমরা তো গরীব হলাম সাথে সাথে যারা আমাদেরকে কেন্দ্র করে আয় রোজগার করত তারা কেমন হবে বোঝাই যায়।
এভাবে আমাদের মত শত শত সাবলম্বী পরিবার নদী ভাঙার ফলে একদম পথে বসে গেছে। এমন পরিবারের সংখ্যা আমার জানামতে হোকডাঙা গ্রামেই অন্তত শতাধিক, যাদের সুখী সমৃদ্ধ জীবন ছিল।
আজ নতুন করে এমন একটি সুখী সমৃদ্ধ পরিবারকে আপনাদের সাথে পরিচয় করে দিতে চাই সম্প্রতি যারা তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে মাথা গোজার ঠাই খুঁজতেই হিমশিম খাচ্ছে।
ছবিতে যে নারীকে দেখছেন মানে আমাদের প্রিয় বউদি বর্তমান থেতরাই ইউনিয়নের ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তারামনি।
ওনাদের পরিবার হোকডাঙা গ্রামের মধ্যে সমৃদ্ধ পরিবারের তালিকায় অন্যতম এবং জনসেবার দিক থেকেও অন্যতম। ধীরে ধীরে ফসলি জমি গুলো তিস্তা গ্রাস করেছে গত ২০বছর ধরে। শুধুমাত্র সাজানো পুরনো বাপ দাদার বাড়িটাই ছিল ঐতিহ্য। এবারের বন্যার ঢলে গত দুদিন আগে বাপ দাদার একমাত্র স্মৃতিচিহ্নও তিস্তা খেয়ে ফেলেছে। এমন একটা অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে নিজেদের ঘরটা জরুরীভাবে রাখার জায়গাটুকুও পাওয়া দুস্কর। কোনমতে আশ্রয় নিয়ে যায় যায় অবস্থা ওদের নিজেরী। অথচ ওদের পরিবারেই কত মানুষের কর্মসংস্থান ছিল, কত মানুষ সেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছে।
আর এখন নদী ভাঙার পরে ওরা নিজেরাইতো কর্ম খুঁজবে নিজেদের বাঁচার জন্য। তাহলে যারা একটু রসদ পেত, সাধারন মানুষ, তাদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
এভাবে বছরের পর বছর নদী ভাঙনের ফলে বট বৃক্ষের মত ছায়া দেয়া পরিবার গুলো হারিয়ে যাচ্ছে নদীর গর্ভে। সাথে সাথে বৃদ্ধি হচ্ছে গরীবের সংখ্যা, হতদরিদ্রের সংখ্যা।
এ রকম বহু পরিবারের গল্প আমার জানা, যারা একমাত্র নদী ভাঙনের পরে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। শুধু নদী ভাঙার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে অবিরত।
দুঃসহ স্মৃতি হাতরে ফেরে তিস্তা পারে।
গরীব তৈরীর কারখানা
Facebook Comments
Share