অনিল চন্দ্র রায়, ফুলবাড়ী
শারীরিক ভাবে অন্য দশজন শিশু কিশোরের মতো স্বাভাবিক না হলেও কাজে কর্মে ও পড়ালেখায় অন্যদের মতই স্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্থ হয়ে পড়া মানিক ২০১৯ সালের জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছে।
মানিক ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর আগে ২০১৬ সালে পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ (গোল্ডেন ) অর্জন করে।
পা দিয়ে লিখে সফলতা অর্জনের পর অত্যন্ত খুশি মানিক রহমান বলেন, ‘আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে পা দিয়ে লিখে এবারের জেএসসি পরীক্ষায় সকল বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যেন সামনে আরও ভালো করতে পারি।’
মানিক রহমান আরও বলেন,‘ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করে যেন তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি সেই কামনা করি।’
মানিকের বাড়ি সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রাম। বাবা একজন কৃষক। ছেলের এমন ফলাফলে খুশিতে প্রায় কেঁদেই ফেলেন মানিকের বাবা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার দুই ছেলে । মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে মানিকের মা ও আমি তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। এজন্য আমার স্ত্রী মরিয়ম বেগমের অবদানটাই অনেক বেশি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক এবারের জেএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজান্ট করেছে। ওর জন্য আমরা গর্ব বোধ করি। সবাই আমার ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন সে যেন সুস্থ সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকতে পারে এবং আল্লাহ যেন ওর স্বপ্নগুলো পূরণে সহায়তা করেন।’
ফুলবাড়ী জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, ‘ শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও মানিক অসাধারণ শিক্ষার্থী। সে আমাদের বিদ্যালয়ের সম্পদ। সে ডান পায়ে বুড়ো আঙ্গুলের ফাঁকে কলম ধরে লিখে আর বাম পা দিয়ে প্রশ্ন ও খাতার পাতা উল্টাতে পারে। এভাবে পরীক্ষা দিয়ে সে জিপিএ-৫ অর্জন করেছে।’
মানিকের প্রতিভার প্রশংসা করে এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘ আসলে ওর প্রতিভা আল্লাহ প্রদত্ত। সে পড়ালেখার পাশাপাশি আবৃত্তি ও গানেও সম পারদর্শী। আমি দেয়া করি আল্লাহ যেন ওর সকল বাসা পূর্ণ করেন।’
পা দিয়ে লিখে জিপিএ-৫ পেয়েছে মানিক
Facebook Comments
Share