৫ হাজার মোবাইল নম্বর মুখস্থ বিস্ময় বালক অন্ধ মিজানুরের

নাজমুল হোসেন:
কন্ঠ শুনে কিংবা ফোন নম্বরের শেষের ২/৩টি ডিজিট বললেই পুরো মোবাইল নম্বর বলে দিতে পারে জন্মান্ধ মিজানুর রহমান। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া জানা এই জন্মান্ধ দরিদ্র পিতার সংসারের হাল ধরেছেন শক্ত হাতে। খুলে বসেছে মোবাইল রিচার্জ এবং বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদীর ব্যবসা। অন্ধ হয়েও কোন সমস্যা নেই আর্থিক লেনদেনে। মুখস্থ রেখেছে প্রায় ৫ হাজার গ্রাহকের মোবাইল নম্বর। নিজের ইচ্ছা শক্তি দিয়ে জয় করেছে প্রতিবন্ধকতা।
অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান এই মিজানুরের বাড়ি কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত রৌমারী উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের টাঙ্গারিপাড়া গ্রামে। কৃষক মনতাজ আলী এবং গৃহিনী মমিনা বেগম দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ছোট মিজানুর। অন্ধত্ব আর সংসারের অভাবের কারণে লেখা পড়ার পাঠ অষ্টম শ্রেণিতেই শেষ করতে হয়েছে তাকে। তবে এই প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। শক্ত হাতে ধরেছে বাবার অভাবের সংসারের হাল। ২০১৭ সালে স্থানীয় বাজারে খুলে বসে মোবাইল রিচার্জ এবং মোবাইল রিচার্জসহ বৈদ্যুতিক সরঞ্চামাদীর ব্যবসা। প্রথম দিকে সামান্য অসুবিধা হলেও কিছুদিনের মধ্যে স্বাভাবিক মানুষের মতই অভ্যস্থ হয়ে পড়ে সে। মুখস্থ করে নেয় ৫ হাজার গ্রাহকের মোবাইল নম্বর। এর মধ্যে নামসহ ৩হাজার মোবাইল নম্বর এবং ২হাজার গ্রাহকের কন্ঠ শুনে কিংবা শেষ দুটি ডিজিট শুনেই বুঝতে পারে পুরো নম্বর। নির্ভুলভাবে চলে মোবাইল রিচার্জসহ অন্য ব্যবসা। মিজানুর জানান, অন্ধ হলেও গ্রাহকের সাথে কখনো আর্থিক লেনদেন হয়নি কোন ধরনের সমস্যা। এই ব্যবসা থেকে দিনে ৩ থেকে ৪শ টাকা আয় করে সে। যা দিয়ে অভাবের সংসার করেন সহযোগিতা।
মিজানুরের বাবা মনতাজ আলি জানান, ভিটেমাটি ১০শতক জমি ছাড়া কিছু নেই। কৃষি কাজ করেই চলছে সংসার। অভাবের সংসারে দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে মিজানুর জন্ম থেকেই অন্ধ। অপারেশনে দৃষ্টিশক্তি ফিরতে পারে এমন আশ্বাসে চিকিৎসার উদ্যোগ নিলেও অর্থাভাবে তা হয়ে উঠেনি। জন্ম থেকেই অন্ধ হওয়ায় দুশ্চিন্তা আর উদ্বিগ্ন দিন কাটছে বাবা-মায়ের। এজন্য সুস্থ জীবন কিংবা অন্য স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপনে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তারা।
কয়েকজন গ্রাহক জানান, মিজানুরের দোকানে কেউ একবার ফ্লেক্সিলোড অথবা টাকা লেনদেন করলেই সেই নাম্বারটিও মুখস্থ রাখতে পারেন। এলাকার পরিচিত মানুষের সকল মোবাইল নম্বর এবং যারা একবার লেনদেন করেছেন তাদের ফোন নাম্বার অনায়াসে বলতে পারে সে। গ্রাহকদের সাথে টাকা লেন-দেনে কোন ঝামেলার ঘটনাও ঘটেনি এখন পর্যন্ত। ফ্লেক্সিলোড এবং বিদ্যুত বিল পরিশোধ করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে তার।
মিজানুরের অন্ধত্ব দেখেই জামানত এবং ভাড়া ছাড়াই সারাজীবনের জন্য দোকানটি মিজানুরের জন্য বরাদ্দ দিয়ে রেখেছেন দোকান ঘরের মালিক চাঁন মিয়া।
বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, মিজানুর প্রতিবন্ধি ভাতা পান ২০১৬ সাল থেকে। তবে দরিদ্র এই পরিবারটির তা যথেষ্ট নয়। মিজানুরের বিরল প্রতিভা দেখে পরিবারটির পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান, খোঁজ খবর নিয়ে এই বিস্ময় বালকের পরিবারের জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!