কুড়িগ্রামে চরে বাড়ছে পেঁয়াজসহ নানা ফসলের চাষ

আব্দুল খালেক ফারুক:
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর তীরবর্তি চার শতাধিক চরে পেঁয়াজসহ বাড়ছে নানা ধরণের ফসলের চাষ। এক সময়ের ধূ ধূ বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। বালুচরে ফসল ফলাতে পেরে কৃষকরা লাভবান হবার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক দিনমজুরের কর্মসংস্থান হয়েছে। আবাদের আওতা বাড়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখছে কৃষি বিভাগ।
কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ১৬টি নদ-নদীর জেলা কুড়িগ্রাম। এসব নদ-নদীর তীরে রয়েছে চার শতাধিক চর। এক সময় এসব চরে ডাল ও বাদাম ছাড়া কোন ফসল ফলতো না। এখন আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্রা, মিষ্টি কুমড়া, শসা, লাউ, মরিচসহ সব ধরণের ফসলের চাষ হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে গত বছরের চেয়ে চরাঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে এসব ফসলের চাষ বেশী হয়েছে। এরমধ্যে গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৮৫ হেক্টর বেশি জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। পাশাপাশি গত বছরে চেয়ে ১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্রা, ৯২১ হেক্টর জমিতে বাদাম, ৪০৫ হেক্টর জমিতে ডালের আবাদ বেশী হয়েছে। দিনে দিনে চরে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ছে। কৃষকরা নতুন নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
বালুচরে আবাদ করা এসব ফসলের ভালো ফলন ও দাম পেয়ে খুশি চরের চাষীরা। অভাব মোচন করে এখন তারা চলছে সমৃদ্ধির পথে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্রের চর ভগতিপুরের কৃষক শাহজাহান আলী জানান, এই চরে এবার ৩৫ একর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। ৫ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা মানিক মন্ডল জানান, এবার চরে পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করা যায় ভালো লাভ হবে। নুনখাওয়ার চরের আমির হামজা, মেহেরজামালসহ অসংখ্য চরের কৃষক এবার প্রথমবারের মতো পেঁয়াজের চাষ করেছেন।
ধরলার চর সারডোবের কৃষক জলিল মিয়া এবার ২ একর জমিতে লাউ ও শিমের চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। আশা করছেন অন্তত দেড় লাখ টাকার লাউ ও শিম বিক্রি করবেন। ধরলার বিস্তৃর্ণ চরে এবার ভুট্রা, মিষ্টি কুমড়া, শসা ও আলুর আবাদ হয়েছে প্রচুর। কৃষক আব্দুল জলিল জানান, জমি লিজ নিয়ে তারা ফসল চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এখন তুলনামুলকভাবে চরেই বেশী ফলন হয় ফসলের। তাই সবার আগ্রহ চরে চাষ করার।
এদিকে বালুচরে নানান জাতের ফসলের চাষ বদলে দিচ্ছে এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র। এক সময়ের বেকার দিনমজুর নারী ও পুরুষরা পাচ্ছেন কাজের নিশ্চয়তা। তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে অনেকের। চর সারডোবের আলু ক্ষেতে কর্মরত দিনমজুর মিনতি রাণী বলেন, ‘আগোত এই সময় বেকার ছিলোং। এলা চরোত আবাদ হয়য়া কাজের অভাব নাই। কাজ করি, হামরা ভালই আছি।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, অনাবাদী বালুচরের সবগুলিতে এখন ফসল চাষ হচ্ছে। তবে চরে পণ্য পরিবহনে অসুবিধার কারণে তারা মসলা জাতীয় ফসলের চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। যাতে অল্প খরচে বেশী লাভবান হতে পারে তারা।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!