সুজন মোহন্ত:
সময়টা সকাল ৯টা ,পৌরসভার পাশেই কুড়িগ্রামের পুরাতন জিয়া বাজার । কেউ এসেছে সবজি কিনতে,কেউব চাল-ডালের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনতে । সকলের মুখে মাস্ক,সকলেই সচেতন । কিন্তু সকলের মাঝে বিরাজ করছে আতংক -উৎকণ্ঠা । এই বুঝি পুলিশ এলো লাঠিচার্জ করতে ! বাজারের ২/৩ টি দোকানে সামাজিক দুরত্ব মানা হলেও,অধিকাংশ দোকানে মানা হচ্ছে না সামাজিক দুরত্ব। আবার অনেক দোকানে মূল্য তালিকা থাকলেও,তাতে লেখা নেই দরদাম । কাঁচা বাজারের সবজি বাদে প্রতিটি খাদ্যসামগ্রীতে ৩/৪ টাকা করে একটু বেশি । অর্থাৎ, দূর্যোগেও স্বস্তি নেই বাজারে ।
এতো গেলো বাজারের কথা, এবার বলবো,পৌরসভার পাড়া-মহল্লার কথা । কুদ্দুস মিয়া্র (ছদ্মনাম) আছে ছোট্ট একটি পানের দোকান,জিয়া বাজারের ঠিক পিছনে । ২ সপ্তাহ আগে পুঁজি শেষ হওয়ায় দোকানের ঝাঁপ বন্ধ করে বিক্রি করছেন পান-সিগারেট । সহায়তা বলতে পৌরসভার কাউন্সিল থেকে ১০ কেজি চাল,কিছু আলু পেয়েছেন, ২ দিন হলো । পেটের দায়ে অনেকটা চুরি করেই খোলা রেখেছেন তার ছোট্ট পানের দোকান । পৌরসভার ২ নং ওর্য়াড, পুরাতন পোস্ট অফিস পাড়া ও মোল্লাপাড়া- সেখানকার দোকানগুলোও চলছে এভাবেই। চলছে অর্ধেক ঝাঁপ ফেলে বা ঝাঁপ বন্ধ করে দোকানদারি। জলিল বিড়ি মোড়,মৎস্য চত্বর,সুজামের মোড় ,রিভার ভিউ মোড়,পুরাতন রেল স্টেশন এসব পাড়াতেও দেখা যায় চায়ের দোকান আর মুদি দোকান খোলা রাখতে। তবে বাইরে থেকে বন্ধ থাকলেও ভিতরে দিব্যি চলছে দোকানদারি। দুপুর ২টার আগে অনেকটা নিজের দাপটে ক্ষুদ্র আয়ের ব্যবসায়ীরা দোকানদারি করেন,আর পুলিশ এলে গুটিয়ে পালিয়ে যান,অনেকটা চোর-পুলিশ খেলার মতো । আর দুপুর ২টার পর কয়েকটি মোড়ে আবার দেখা যায় ৩/৪ জনের জটলা,সকলের উদ্দেশ্য পুলিশের গাড়ি দেখা,আর গাড়ি দেখলেই দৌড়ে গলিতে লুকিয়ে পড়া । পৌরসভার ঈদগাহ মাঠে,মজিদা কলেজ মাঠে আর রিভার ভিউ স্কুল মাঠে চলে ক্রিকেট,লুডু, আর গল্পের আসর । মিস্ত্রি পাড়ার পৌরসভার পিছনের পুকুরেও বিকেল হলে দেখা যায় এলাকার কিশোরদের গল্পগুজব । অবশ্য পুলিশ এসব জায়গায় পালা করে টহল দিলেও তারা চলে যাবার পর আবার আগের অবস্থা হয় ।
ধরলা নদী পার হয়ে নিজেদের দ্রব্যসামগ্রী কিনতে গ্রামের মানুষ শহরে ভয়ে আর আতংকে প্রবেশ করছেন। আর কুড়িগ্রাম পৌরসভাটি জেলা শহরের মূল কেন্দ্র হওয়ার কারণে জটলা লেগেই থাকে । তবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে পুলিশ – প্রশাসন । সরকারি নির্দেশ পালনে তাদের যথেষ্ট তৎপরতা দেখা যাচ্ছে । মানুষকে করোনার বিষয়ে সর্তক করতে পুলিশকে সব ধরনের ইতিবাচক কাজে দেখা যাচ্ছে। পৌরসভার অনেক সচেতন মানুষ এটিকে ইতিবাচক হিসেবেই নিয়েছেন। এতকিছুর মধ্যেও সচেতন রয়েছে পৌরবাসী,প্রতিটি পাড়ায় বসানো হয়েছে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা । যারা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন, তারা গ্লাভস আর মাস্ক পড়তে ভুলছেন না।