কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে ত্রাণের দাবিতে কলোনীর অধিবাসীদের বিক্ষোভ

বিভাস প্রতিবেদক:
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে ত্রাণের দাবিতে আড়াই থেকে তিনশ কলোনী পরিবার বিক্ষোভ করেছে। রোববার (১৯এপ্রিল) সকালে উপজেলার জয়মনিরহাট ইউনিয়নে পরিত্যক্ত রেল কলোনীর অধিবাসীরা কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে। অভিযোগ উঠেছে একটি মহলের ইন্ধনের কারণে এই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরুজুল ইসলামসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারিদের সাথে কথা বলেন। তাদের অভিযোগ শুনে জানতে পারেন উষ্কে দিয়ে তাদেরকে রাস্তায় নামানো হয়েছে। পরে প্রকৃতদের তালিকা করে ত্রাণ দেয়া হবে বলে আশ^াসের প্রেক্ষিতে বিক্ষোভকারীরা স্থান ত্যাগ করে।
জয়মনিরহাট ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর আলম উজ্জ্বল নামে এক চেয়ারম্যান প্রার্থী গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছিল। তারই নেতৃত্বে রোববার কলোনীর লোকজনকে উষ্কে দিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করানো হয়। তিনি আরো জানান, জয়মনিরহাট ইউনিয়নে তিন কিলোমিটার ব্যাপী পরিত্যক্ত রেললাইন কলোনিতে ৫টি ওয়ার্ডের প্রায় ২ হাজার মানুষ বসবাস করে। এদের অধিকাংশই কুলি, লেবার ও শ্রমিক। এদেরকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাস্তায় নামানো হয়। আজ ইউনিয়নে ২৬৯ ভিজিডিধারীদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাল দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমি ৪ মে.টন ত্রাণের চাল বিতরণ করেছি। যাদের অনেকেই বিক্ষোভকারীদের পরিবারের সদস্য। আমি আরো ৪ মে.টন চাল পেয়েছি। সোমবার সেগুলো বিতরণের কথা রয়েছে। এরইমধ্যে পরিকল্পিভাবে কলোনীর লোকজনকে জড়ো করে সরকারের সামাজিক দুরত্বের নির্দেশনা ভঙ্গ করে তাদেরকে বিপদের মধ্যে ফেলানো হল।
এ ব্যাপারে বিক্ষোভে অংশ নেয়া জোবেদা ও সালেহা বেগম জানান, আমরা শুনেছি ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় ১৪ মে.টন চাল ও ৯লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমারা কিছু পাইনি। এজন্য রাস্তায় নেমে এসেছি। অপরদিকে ছোলদার ও সালাম নামে দুজন শ্রমিক জানান, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র পনের দিন আগে মেম্বাররা নিয়ে গেলেও ত্রাণ দিতে বিলম্ব করছে। এজন্য রাস্তায় এসেছি।
এছাড়াও বিক্ষোভকারীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, যাদের টাকা আছে তারা রেশন কার্ড পাচ্ছে। গরীব মানুষ রেশন কার্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব সরকারের দেখা উচিৎ। আমরা ঘরে বসে থেকে জমানো টাকা শেষ করেছি। এখন কারো কাছে টাকাও চাইতে পারি না। ভিক্ষাও করতে পারি না। আমরা এখন কী করবো!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জয়মনিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনার গত ২৯ মার্চ এই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২২মার্চ নির্বাচন স্তগিত করা হয়। ওই নির্বাচনে স্থানীয় সাবেক জাপা নেতা জাহাঙ্গীর আলম উজ্জ্বলসহ ৬জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলো। অভিযোগ উঠেছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট ব্যাংক বাড়াতে তিনি ফেসবুকসহ স্থানীয় ভোটারদের নানাভাবে ইন্ধন জোগাচ্ছেন।
অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে জাহাঙ্গীর আলম উজ্জ্বল জানান, আমার বিরুদ্ধে এটি মিথ্যা প্রচারণা। আপনারা আমার ফেসবুক চেক করতে পারেন, আমি সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলিনি। আমি নিজেই বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি। আমাকে হেয় করতে একটি মহল শ্রমিকদের বিক্ষোভের সাথে আমার নাম ব্যবহার করছে। আমি এর সাথে কোনভাবেই জড়িত নই।
এদিকে বিক্ষোভের খবর শুনে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরুজুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) জাহাঙ্গীর আলম, সার্কেল এসপি শওকত আলী, অফিসার ইনচার্জ মুহা: আতিয়ার রহমান ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজাহান সিরাজ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করেন।
এ ব্যাপারে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহজাহান সিরাজ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পরে বিক্ষোভকারীদের একটি চাতালে নিয়ে গিয়ে তাদের অভিযোগগুলো শুনি। এদের অনেকেই ভিজিডিসহ ত্রাণের চাল পেয়েছে। যারা পায়নি তাদের তালিকা করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একটি টিম করে দায়িত্ব দিয়েছেন।
এ ব্যাপাওে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরুজুল ইসলাম জানান, পরিকল্পিতভাবে এই বিক্ষোভের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এজন্য কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হচ্ছিল। যা আমাদের হাতে এসেছে। আমরা পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিব। সরকার কর্মহীন মানুষদের জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। আমরা সেগুলো তাদের হাতে পৌছে দিবো।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!