রেলিং বিহীন কাঠের সেতুই সীমান্তবাসীর একমাত্র ভরসা

অনিল চন্দ্র রায়,ফুলবাড়ী:
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে নীলকমল নদীর উপর ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের কাঠের সেতুটিই একমাত্র ভরসা সীমান্তবাসীর। সেতুটির রেলিং না থাকায় র্দীঘদিন ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ শতশত মানুষ পারাপার করছে। ফলে প্রতিদিনেই নষ্ট পাটাতন ও রেলিংবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে পাড়াপাড়ের সময় অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নাখারজান সীমান্তে প্রায় ১০৫টি পরিবারের ৪৫০ জন মানুষ এই কাঠের সেতু দিয়ে মুল ভুখন্ডের সাথে যুক্ত। এলাকাবাসী এখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মানণর দাবি দীর্ঘদিনের কিন্তু কোনভাবেই দাবি পুরণ হচ্ছে না সীমান্তবাসীর। এই ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুটি রেলিং সংযোজনসহ দ্রুতগতিতে সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সেতুটি লাগোয়া এক পাশে আন্তর্জাতিক সীমানার মেইন পিলার ৯৪০ ও অপর পাশে মেইন পিলার ৯৪১ রয়েছে। মাঝে মধ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি’র) সদস্যরা টহল দিতে আসে এখানে। নাখারজান সীমান্ত গ্রামটির একদিকে ভারতীয় কাঁটা তারের বেড়া আর তিনদিকে ঘিরে রয়েছে নীলকমল নদী। এই নদীটি কখনো ভারতে আবার কখনো বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি একটি ছোট আকারে নদী হলেও বর্ষাকালে পানিতে ভরে থাকে। স্রোতও থাকে এই নদীতে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে জলশুন্য হয়ে পরে। কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল নাখারজান সীমান্ত গ্রামের মানুষকে নীলকমল নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়।
স্থানীয় আশাদুল ইসলাম (৪৫) ও আনিচুর রহমান (৪২) জানান, ‌‌১৯৮৭ সাল পর্যন্ত নীলকমল নদীর উপর কাঠের সেতু ছিলো। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় আর কাঠের সেতু নির্মাণ হয়নি। পরে বাঁশ দিয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে তাদের চলাচল করতে হয়েছে অনেক বছর। ২০১৬ সালে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার স্থানীয়দের সাথে নিয়ে পুণরায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সেতু দিয়ে চলাচল করছি। তাই স্থায়ী ভাবে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের জোর দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় কৃষক আশরাফুল হক (৪৭) জানান, এই সেতু দিয়ে শুধু তারা চলাচল করেন না। সীমান্তের কাঁটাতারের বাইরে থাকা ভারতীয় অধিবাসীরাও এই সেতু ব্যবহার করেন। নাখারজান সীমান্ত গ্রামের সাথে রয়েছে ভারতের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার সেউতি পার্ট-২ গ্রাম। ভারতীয় এই গ্রামটি কাঁটাতারের বাইরে রয়েছে। এখানে প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক পরিবার বসবাস করেন। সন্ধ্যার পর কাঁটাতারের গেট বন্ধ হয়ে গেলে ভারতীয় এসব নাগরিক বাংলাদেশের হাট-বাজারে আসেন এই সেতু দিয়ে। কাঠের এই সেতুটি বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতির একটি উদাহরণ বলে তিনি জানান।
ভারতীয় সীমান্ত গ্রাম সেউটি-২ এলাকার কৃষক আব্দুস সামাদ (৬২) জানান ‘আমরা কাঁটাতারের গেট দিয়ে ভারতের মুল ভুখন্ডে সবসময় যাতায়াত করতে পারি না। বাংলাদেশি সীমান্ত গ্রাম নাখারজানের সকল মানুষই আমাদের সু-পরিচিত ও অনেকে আবার আত্মীয়-স্বজন। আমরাও কাঠের সেতুটি ব্যবহার করে বাংলাদেশে হাট-বাজারে আসি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করি। তিনি আরও জানান, সীমান্তে সম্প্রীতি নিয়ে বেঁচে আছি। আমাদের মাঝে কোন ঝগড়া নেই, বিবাদ নেই। আমরা একে অপরের বিপদে ছুটে আসি। আমরা সবাই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। তিনি এমনটি জানিয়ে বলেন নীলকমলের উপর একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণ হলে তাদের জন্য মঙ্গল হবে।
ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ-হারুন জানান, নীলকমল নদীর উপর কংক্রিটের সেতু নির্মাণের উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছিল অনেক বার, কিন্তু ভারতীয় বিএসএফের বাঁধার মুখে তা সম্ভব হয়নি। সীমান্ত আইন অনুযায়ী সীমান্তে অবকাঠামো কাজ করা নিষেধ থাকায় নীলকমল নদীতে সেতু নির্মাণ হচ্ছে না। তবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে ভারতীয় সংশ্লিষষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করে অনুমতি পেলে নাখারজান সীমান্তে নীলকমল নদীর উপর সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!