ধরলার চরে বাদাম চাষে বাজিমাত

সাইমুল ইসলাম সাজু:কুড়িগ্রাম সদরের ধরলার চরে প্রথমবারের মত বাদাম চাষ করে বাজিমাত করছেন ৩ বাদাম চাষী। জেলার রাজারহাট উপজেলার নাজিমখাঁ ইউনিয়নের বাসিন্দা শহিদুল, নয়ন, শরিফুল ধরলা নদীর চরে জমি লীজ নিয়ে তারা আলু ও বাদামের চাষ করেছেন। 
চর সারোডোবের এই চরে এ বছর প্রথম ১২ একর জমিতে বাদাম চাষ করেন তারা। একই জমিতে আলু চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় এই তিন বাদামচাষীকে। আলুর ফলন ভালো হলেও দাম আশানুরূপ না পেয়ে ওই জমিতে বাদাম চাষ করে লাভের আশা করছেন তারা।  ধরলার চরের বাদাম চাষীরা জানায়, ধরলায় এবারেই প্রথম ১২ একর জমিতে বাদামের চাষ করেছেন তারা। এর আগে তিস্তার চরে বাদামের চাষ করেছেন। চরে বাদাম চাষে একর প্রতি খরচ ১০ হাজার টাকা। বাদাম তোলা সহ খরচ ১৫-২০ টাকায় দাঁড়ায়। বীজ তোলাতে বেশি ব্যয় ধরা হয়। বাদাম তোলায় একর প্রতি সবমিলিয়ে ব্যয় ২০ হাজার টাকা। গতবছর বাদামের বীজের দাম কম ছিল লাভের পরিমাণ ছিল বেশি। কিন্তু এবছর বাদাম বীজের  দাম বেশি হওয়ায় বাদাম চাষাবাদের খরচও বেড়ে গেছে।
স্থানীয় বাজারে বাদাম বীজ না পেয়ে লালমনিরহাট জেলার দুরাকুটি থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে ১২ মণ বীজ নিয়ে আসেন ধরলার চরের বাদাম চাষীরা। গতবার প্রণোদনার বীজ পেলেও এবছর প্রণোদনার বীজ পাননি বলে জানান তারা। গতবছর ২৫ কেজি প্রণোদনা বাদাম বীজ পেয়েছিলেন তবে আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় সেই বাদাম বীজ গজায়নি বলে জানান বাদামচাষীরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাদামের  পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বাদামচাষীরা। এ কাজে তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও সহযোগিতা করছেন। চর থেকে বাড়ির দুরত্ব বেশি হওয়ায় ও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা না খাকায় চরের মধ্যে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন তারা। বাদাম চাষী শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাদাম চাষে সার, কীটনাশক ও নিড়ানির প্রয়োজন হয় না বলে বাদাম চাষ সহজ এবং লাভজনক। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৫ মন বাদাম পাওয়া যায়। আর প্রতি মন বাদামের দাম দুইহাজার পাঁচশ’ টাকা থেকে তিনহাজার টাকা।
বাদামের চাষ বেলে-দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বাদাম চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম লাগে। সঠিক পরিচর্যা পেলে ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বাদামের ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
গতবার তিনজনে তিস্তার চরে প্রত্যেকে ১০ একর করে বাদামের চাষ করেছেন। বাদামের চাষ ধরলায় প্রথম। গতবছর বীজ বাদাম প্রতি মণ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। এবছর প্রতি মণ বাদামের বীজ ৮-১৩ হাজার টাকা মণ দরে কিনতে হয়েছে। সব  খরচ বাদে একর প্রতি আয় ১৫ হাজার টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন এই তিন বাদাম চাষী। 
শহিদুল ইসলাম জানায়, তিনি ১০ বছর বয়স থেকে বাদাম চাষের সাথে সম্পৃক্ত। গতবছর নিজেই তিস্তার চরে ১০ একর জমিতে বাদামের চাষ করে সব ব্যয় বাদে একর প্রতি ১৫ হাজার টাকার বেশি লাভ করেছেন বলে জানায়। 
উল্লেখ্য বাদাম চাষের আগে চরের ১২ একর জমিতে আলু চাষ করে তেমন লাভের আশা দেখতে পারেননি। অন্যান্য জমির চেয়ে চরে আলুর ফলন বেশি হয়েছে। একরে ১০০ বস্তার বেশি (৯০ কেজি)। চরের আলু চাষ একটু ব্যয়বহুল। যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষেতেই ৭-৯ টাকা দামে আলু বিক্রি করছেন। ফলে ক্ষতি গুনতে হয়েছে প্রায় ৫ লাখের বেশি। এখন বাদামে দাম পেলে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানায় বাদামচাষীরা।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!