বামন দম্পতির কষ্টের জীবন

বিভাস প্রতিবেদক:
ভালো নেই বামন দম্পতি। ভিক্ষে বৃত্তি ছেড়ে দেয়ার শর্তে উপজেলা প্রশাসনের দেয়া নতুন ঘর পেয়েছেন। কিন্তু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়ায় আবারো ফিরে গেছেন সেই পেশায়। এখন অসুস্থ এই দম্পতির দিন চলছে অন্যের অনুগ্রহে। বয়স্কভাতার সামান্য টাকা আর দিন শেষে যা ভিক্ষে পান তাই দিয়ে কোনমতে দিন পার করছেন।
আবদার হোসেনের উচ্চতা সাড়ে ৩ ফুট। বয়স ৬৯। প্রায় সোয়া ৩ ফুট অরেচার উচ্চতার অরেচার বয়স ৬২। তারা দ’ুজন বাস করেন সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামে। ১০ বছর আগে ঘর বাঁধেন দ’ুজনই। তারপর থেকে সুখ—দু:খ ভাগাভাগি করে চলছেন এক সাথে। শারীরিক কারণে কাজ করতে না পারায় ভিক্ষেবৃত্তি ছাড়া উপায় ছিলনা। বাস করার মতো তাদের ছিলনা একটি ঘর। এ অবস্থায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সাবেক নিবার্হী অফিসার আমিন আল পারভেজের উদ্যোগে প্রায় এক লাখ টাকা ব্যয়ে দু’কক্ষ বিশিষ্ট একটি দোচালা টিনের ঘর নিমার্ণ করে দেয়া হয়েছে। ভিক্ষেবৃত্তি থেকে তাদের সরিয়ে নিতে ছোট একটি দোকান করে দেয়া দেয়ার উদ্যোগ ছিল তার। কিন্তু পদোন্নতি নিয়ে চলে যাবার পর এই উদ্যোগ থমকে গেছে। একাধিকবার তারা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে ধণার্ দিলেও লাভ হয়নি।
অরেচা বলেন, ‘এতোদিন হামার ঘর ছিলনা। বৃষ্টিত ভিজি কষ্ট করি ছিলোং। নতুন ঘর, টয়লেট, রান্নাঘর পায়য়া হামরা খুব খুশি হচি। কিন্তু আয়—রোজগার না থাকায় ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।’
আবদার আলী বলেন, ‘ইউএনও সাইব দোকান তুলি দিবার চাইছিলো। তাই চলি যাবার পর আর কাইয়ো কথা শোনেনা। দিন দিন শরীল খারাপ হয়া যাবার নাগছে। এলা জীবনটা বাঁচাই কেমন করি?’
আবদার হোসেন (৬৭) জানান, ৩০ বছর আগে তিনি ভাগ্যের সন্ধানে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়ন থেকে চলে আসেন কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাজী মিজানুর রহমানের বাড়িতে। সহায় সম্পদ না থাকায় থেকে গেছেন এখানে। মনিবের বাড়িতে কৃষিকাজে নিয়োজিত করেছেন নিজেকে দীর্ঘ সময়। হাল চাষও করেছেন। ১৩ বছর একটি বিয়েও করেন তিনি। স্ত্রীর নাম রেজিয়া। ২ বছর ঘর করার পর ঘটে বিচ্ছেদ। ৩ বছর পর আবার বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম আরজিনা। ২ মাস ঘর করার পর ডিভোর্স দিয়ে চলে যান তাকে। খর্বকায় মানুষ বলে স্ত্রী টেকেনা— গ্রামের লোকেরা বলাবলি করে। সেই অপবাদ ঘোচাতে ২০১০ সালে রংপুরের পীরগঞ্জের মধুপুর গ্রামের বামন কন্যা অরেচাকে তৃতীয় স্ত্রী রুপে গ্রহন করেন আবদার।
এরপর মনিব মিজানুর রহমানের বাড়িতেই দু’জনেই কাজ করতেন । একজন গরু দেখাশুনা, অন্যজন ঘর কন্নার কাজ করতেন। নিজের জমি— জিরাত, ঘর —বাড়ি কিছুই নেই। মনিব মিজানুর রহমান মারা যাবার পর তার বাড়ির পিছনে একটি জায়গা দেন। সেখানেই ঝুপড়ি তুলে থাকতেন আর ভিক্ষের আয়ে চালাতেন সংসার। আর স্বপ্ন দেখতেন নিজের একটি বাড়ির।
এক সময় মনিবের বাড়িতে সাধারণ উচ্চতার মানুষের মতো হালচাষ, ফসল রোপন ও উত্তোলন, ধান ভানাসহ যাবতীয় কৃষিকাজ করতেন আবদার। এখন বয়সের ভার আর শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধায় ঠিকমত হাঁটতেই পারেননা। লাঠি ভর দিয়ে হাঁটেন। তারপরেও অন্যের কাছে হাত পাততে চাননা ব্যতিক্রমী এই দম্পতি। ভিক্ষেবৃত্তি ছেড়ে ফিরতে চান স্বাভাবিক জীবনে। আবদার বলেন,‘ঘরতো তুলি দিছে, এলা হামার আয় ইনকামের ব্যবস্থা করলে হামরা ভিক্ষা করব্যার যাবার নই।’
এই বামন দম্পতিকে কালের কণ্ঠ, ইনডিপেনডেন্ট টিভি ও মাসিক বিভাস এ একাধিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!