কুড়িগ্রামে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ দুশ স্কুল, শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম হবার আশঙ্কা

আব্দুল খালেক ফারুক:
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে স্কুল। প্রস্ততি চলছে স্কুলে স্কুলে। কিন্তু কুড়িগ্রামে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় দুশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এ বছর বষার্ ও বন্যায় ৭টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এখনও স্থানাভাবে স্কুল গৃহ নিমার্ণ সম্ভব হয়নি। ঝুঁকিতে থাকা আরো ২০টি স্কুলের শিক্ষক—শিক্ষার্থীরা আছেন ভাঙনের আতংকে। পাশাপাশি করোনার কারণে দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ এবং বন্যায় আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। স্কুলে আসা যাওয়ার রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে প্রবল ে¯্রাতে। কোন কোন স্কুলে মাঠ ও আশেপাশে জমে আছে পানি। উচ্চ বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র দীর্ঘসময় বসে থেকে অভাব ঘুচাতে কাজ করতে গেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তাছাড়া করোনাকালীন বাল্য বিয়ের হার বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন সোমবার কুড়িগ্রাম সদরের ধরলা তীরবতীর্ সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে স্কুলের মাঠে এখনও পানি। এ্যাসাইমেন্ট জমা দেয়ার জন্য দুজন ছাত্রী স্কুলে আসছেন কোমর পানি ভেঙে। তিনজন শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্কুল খোলার। প্রধান শিক্ষক অতুল চন্দ্র রায় স্কুল খোলার শুরুর দিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, স্কুলের চারদিকে পানি। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। অনেকের বই—খাতা নষ্ট হয়েছে। তাই শুরুতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কিছুটা কম হতে পারে। একই কথা বলেন অভিভাবক মতিয়ার রহমান। তিনি জানান, স্কুল আসা যাওয়ার পথে বড় বড় গর্ত পড়েছে। তাই সন্তানদের স্কুলে পাঠানো ঝুঁকি মনে করছেন তারা।
এদিকে নদীর ভাঙনে এ বছর বিলীন হয়েছে ৭টি স্কুল। উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা, চেরাগের আলগা ও বগুলাকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও ভাঙনে বিলীন হয়েছে নাগেশ্বরীর আকবর আলী ও রাজারহাটের গতিয়াশাম বগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া গত বছর স্থানান্তর করা রৌমারীর ফলুয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ বছর নদী ভাঙনের আবারও বিলীন হয়েছে। এসব স্কুলের মালামাল স্কুল কতৃর্পক্ষ সরিয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রেখে দিয়েছেন। তবে স্কুল নিমার্ণের জন্য নতুন করে জমি না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরী হয়েছে এসব স্কুলে। আর এতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।
উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরে চেরাগের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এক মাস আগে নদী ভাঙনের কবলে পড়ায় স্কুলগৃহ ভেঙে মোহর আলী মেম্বারের বাড়িতে রাখা হয়েছে। নতুন করে জমি ও অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় স্কুল নিমার্ণ সম্ভব হয়নি। প্রধান শিক্ষক জানান, যেহেতু স্কুল খুলছে। তাই স্কুলের একটি পুরাতন ঘর কারো জমিতে উত্তোলন করে কার্যক্রম চালু রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একই অবস্থা রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াসাম বগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির। তিস্তার ভাঙনে বিলীন হবার পর প্রধান শিক্ষক লস্কর আলীর আঙিনায় মালামাল স্তূপ করে রাখা হয়েছে। জায়গা না পাওয়ায় এখনও স্কুলগৃহ নিমার্ণ করা সম্ভব হয়নি।
সদর উপজেলার ছাটকালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি রয়েছে ভাঙনের ঝুঁকিতে। সংলগ্ন বেশ কিছু পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। নিচু এলাকা ডুবে আছে পানিতে। তাই স্কুল খুললেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম হবে বলে মনে করেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর।
এই অবস্থা চরের উচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে। সদর উপজেলার ধরলা নদীর তীরে অবস্থিত সারডোব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলার রহমান জানান, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী কাজ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গেছে। বেশ কিছু ছাত্রীর বাল্যবিয়েও হয়ে গেছে। তাই শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক কম হবে বলে মনে করছেন তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মো: শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্কুলের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে নদী ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ স্কুলগুলোতে যেন লেখাপড়া বিঘ্নিত না হয়—সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Facebook Comments
Share
  •  
  •  
  •  
  •  
error: Encrypted Content!